ফরিদপুরে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া শিশু তানহাকে উদ্ধার করেছে র্যাব। সোমবার (১২ মে) বেলা ১১টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেন ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শামীম হাসান সরদার।
সোমবার বিকালে নির্বাহী আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে রাব্বী শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব কর্মকর্তা জানান, নগরকান্দা থানার রামপাশা এলাকায় পপি বেগমের (৩৭) সঙ্গে তার স্বামী কাইয়ুম বিশ্বাসের (৪০) খোলা তালাক হয়। তাদের শিশু কন্যা তানহা আক্তারকে (৮ মাস) কাইয়ুম বিশ্বাস জোর করে রেখে দেন। পরে পপি তার কন্যাকে আনতে গেলে তার সাবেক স্বামী মেয়েকে দিতে অস্বীকৃতি জানান। মেয়েকে উদ্ধারের নিমিত্তে আদালতে মামলা করেন মা।
তিনি আরও জানান, তল্লাশি পরোয়ানামূলে শিশুটিকে রবিবার বিকালে ফরিদপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে নগরকান্দা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে শিশুটিকে ফিরে পেতে গত বছরের ডিসেম্বরে ফরিদপুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন শিশুটির মা পপি বেগম। তবে মামলায় সন্তান বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এবং ফিরে পেতে আর্জি জানানো হয়। এরপর চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সার্চ ওয়ারেন্টের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য নগরকান্দা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই ইরানুল ইসলাম জানান, র্যাবের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাদীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানান, বিকালে নির্বাহী আদালতের বিচারক উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে রাব্বী জানান, নিখোঁজ শিশুটি র্যাব উদ্ধার করে আদালতে পাঠিয়েছে। শিশুটির মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ধার করা ৮ মাসের বাচ্চা কে তার জন্মদাতা মায়ের কাছে দেওয়া হয়। আগামী ২ জুন ধার্য তারিখে এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
দীর্ঘ পাঁচ মাস পর তানহা আক্তারের মা পপি বেগম বাচ্চাকে কোলে পেয়ে আবেগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরতে পেরে বুকটা জুড়িয়ে গেছে। তবে এতদিন আমার বাচ্চাকে যারা কেড়ে নিয়ে অন্যত্র রেখে দিয়েছিল তাদের বিচার চাই। আর আগামীতে যেন কোনও হয়রানি ছাড়া বাচ্চাকে লালন-পালন করতে পারি সেই দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, তিন বছর আগে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের হান্নান সরদারের মেয়ে পপি বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামপাশা গ্রামের কাইয়ুম বিশ্বাসের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো এবং স্বামী ও ননদ মিতা বেগম বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করতে থাকেন। এর মাঝে তাদের একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। পাঁচ মাস আগে তাদের তালাক হয়। তালাকের পরে শিশু তানহাকে জোর করে রেখে দেওয়া হয়।