গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা বিএনপির মতবিনিময় সভা শেষে সভাস্থলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সভামঞ্চসহ চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুরের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভির গাজীপুরের চিত্রসাংবাদিক রকি হোসেনসহ (২৬) তিন জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৭ মে) দুপুর সোয়া ২টার দিকে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চোরাগআলী মোড় এলাকায় বিএনপির মতবিনিময় সভাস্থলে এ ঘটনা ঘটে।
আহত অপর দুই জন হলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সেলিম এবং তার গাড়িচালক দেলোয়ার হোসেন। আহত চিত্রসাংবাদিক রকি হোসেনকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দীন আহম্মেদ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন মেজর (অব.) শফিউল্লাহ মিঠু। গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি এবং কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দীন আহম্মেদ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির আয়োজনে চোরাগআলী মোড় এলাকায় তাদের পূর্বনির্ধারিত মতবিনিময় সভা চলছিল। ওই সভায় কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয়। সভায় উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে নেতাকর্মীরা চলে গেলে গণমাধ্যমকর্মীরা সভাস্থলের পাশেই একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় হঠাৎ করে ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন যুবক এসে সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন রকি হোসেনসহ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী তাদের ভাঙচুরের দৃশ্য ধারণ করতে গেলে হামলাকারীরা গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এসময় তারা যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন রকির মাইক্রোফোন, পরিচয়পত্র, লাইভ ডিভাইস এবং ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। আহত অপর দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তারা আরও জানান, আমন্ত্রিত অতিথি শফিউল্লাহ মিঠুর বাবা চিকিৎসক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ সাবেক ঢাকা-২২ (বর্তমানে গাজীপুর-৪) কাপাসিয়া আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। এ আসনে তার ছেলে মেজর (অব.) শফিউল্লাহ মিঠু বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে জনমত গঠন করছেন।
অপরদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর ছেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নানও এ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, ‘গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নানের নামে স্লোগান দিয়ে হামলাকারীরা সভাস্থলে আসে। পরে সেখানে হামলা করে সভামঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করে এবং সাংবাদিকদেরও হামলা করেছে।’
কেন হামলা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিয়াজুল হান্নান মনে করেন তিনি ছাড়া কাপাসিয়ায় আর কেউ রাজনীতি করতে পারবেন না। এর আগেও তারা আমাদের বিভিন্ন সভায় হামলা করেছে।’
গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, ‘হাসপাতালে গিয়ে আমি আহত সাংবাদিককে দেখে আসছি। সংবাদ সংগ্রহের জন্য সংবাদকর্মীরা সবখানে যাবেন। দলীয় পরিচয়ে কেউ সংবাদকর্মীদের ওপর আক্রমণ করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির মতবিনিময় সভাস্থলে হামলার ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
