X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

একতারায় সচ্ছলতা

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:৩৮আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:৪৪

একতারা তৈরি করছেন এক কারিগর বাউল গানের অন্যতম অনুষঙ্গ একতারা। আর এই একতারাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ির আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশকিছু কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে লালনের একতারাসহ নানা সামগ্রী। উৎপাদিত এসব একতারা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। একতারা তৈরি করে এই এলাকার প্রায় আড়াইশ পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরেছে অনেক পরিবারে। তবে, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে এই বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে লাভ কিছুটা কম হচ্ছে বলে জানান এখানকার কারুশিল্পীরা।

একতারা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর একতারা তৈরির মূল উপাদান বাঁশ, কাঠ আর চামড়া। তবে লাউয়ের বশ বা খোল ও নারকেলের মালাই দিয়ে একতারা তৈরি হয়। মুলি বাঁশ মূলত পাশের জেলা ঝিনাইদহ ও যশোর থেকে সংগ্রহ করা হয়। লাউয়ের বশ স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে এবং চামড়া কেনা হয় নাটোর থেকে। উপজেলার ছেঁউড়িয়া, বিশ্বাসপাড়া, মণ্ডলপাড়া, জয়নাবাদ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এই কাজ করে হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল। ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ির আশপাশে প্রায় বাড়িতেই গড়ে উঠেছে একতারা কারখানা। এসব কারখানায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ি, বাটাল, কাঁচি দিয়ে কাজ করেন একতারা কারিগররা। এক একটি কারখানায় প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ একতারা তৈরি হয়। একতারার দাম ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে বায়না করে আরও সুন্দর করতে চাইলে দামটা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।

একতারা তৈরি করে স্বাবলম্বী ছেঁউড়িয়ার একতারা বাড়ির আমিরুল ইসলাম বাদশা। তিনি এক যুগ আগে ছেঁউড়িয়ায় গড়ে তোলেন একতারা বাড়ি নামে একটি কারখানা। তখন মাত্র ১৩০০ টাকা পুঁজি নিয়ে বাড়িতেই একতারা তৈরি শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে তার। একতারা তৈরি লাভজনক হওয়ায় তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ‘একতারা বাড়ি’ কারখানায় এখন প্রায় ১৪ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে ছোট-বড় নানা আকৃতি ও ডিজাইনের একতারা।

একতারা তৈরির উপকরণ একতারা বাড়ির মালিক আমিরুল ইসলাম বাদশা জানান, একতারা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয় তরলা বাঁশ, লাউয়ের খোল, মেহগনি কাঠের তৈরি ছোট-বড় সাইজের খোল, নারকেলের মালাই, ছাগলের চামড়া, স্টিলপাত ও সুরের তার। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় স্ক্রু, ওয়াসার, বোতাম ও রং। একতারা বাঙালিদের অন্যতম লোকবাদ্যযন্ত্র।

একতারা বাড়ি কারখানায় কর্মরত নাঈম হাসান বলেন, ‘স্থানীয় একটি কলেজে ম্যনেজমেন্টে স্নাতক প্রথম বর্ষে লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কারখানায় প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছি। এখানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারে সহযোগিতা করতে পারি।’

একই কারখানায় কর্মরত ফারুক হোসেন জানান, পুরো বছর জুড়েই একতারার ব্যবসা ভালো চলে। তবে বৈশাখ আসলে এর বিক্রি বেড়ে যায়।

ছেঁউড়িয়ায় লালন একাডেমি মার্কেটের দোকানি ইমরান শেখ জানান, দেশের বিভিন্ন পর্যটন নগরে এসব একতারা ও লালনের কাঠের খোদাই করা প্রতিচ্ছবি বিক্রি করা হয়। ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী পাইকারি কিনে নিয়ে যান।

একতারা দেখছেন এক ক্রেতা ছেঁউড়িয়ার নীশিতা একতারা কারখানার মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এখন শ্রমিকদের মজুরি ছাড়াও সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় একতারা বিক্রি করে লাভ কম হচ্ছে। তবে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে আমরা আরও বেশি উপকৃত হতে পারতাম।’

লালন ভক্ত বলাই সাঁই জানান, লালনের গান আর একতারার টুংটাং সুরে ভক্ত-অনুসারীরা খুঁজে পান অমৃতের সন্ধান। ভক্তদের তৃষ্ণা মেটাতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আশপাশে কারিগররা একতারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষা পাচ্ছে, অন্যদিকে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “একতারা কারখানার মালিকরা সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সদস্য হয়ে ঋণ সুবিধা নিতে পারেন। তাছাড়াও যুব উন্নয়ন, সমবায় এবং বিআরডিবি অফিস ঋণ সুবিধা নিতে পারেন। তারা যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সুবিধা দিতে পারবো।”

/বিএল/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অবাধে বালু উত্তোলন করে রাতের আঁধারে পাচার
অবাধে বালু উত্তোলন করে রাতের আঁধারে পাচার
ইইউ’র নিষেধাজ্ঞাকে ভণ্ডামি বললেন পুতিন মিত্র
ইইউ’র নিষেধাজ্ঞাকে ভণ্ডামি বললেন পুতিন মিত্র
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির