বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে শ্রম অভিবাসন ইস্যুতে ‘অযৌক্তিক অভিযোগ’ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার প্রতিবেদনে নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নত করতে এই আহ্বান করেছে কুয়ালালামপুর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব আজমান মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলাদেশে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, মানবপাচার ও অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগ মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অথচ অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।
ওই চিঠির একটি কপি যাচাই করেছে ব্লুমবার্গ। ২৩ এপ্রিল লেখা ওই চিঠি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূইয়াকে পাঠানো হয়।
পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা চিঠিটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহু বাংলাদেশি ও অন্যান্য অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এসব অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়ার মানবপাচারবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সম্প্রতি, দুই দেশের মধ্যে নতুন করে কর্মী নিয়োগ চালুর আলোচনা চলছে। গত বছর ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। অভিযোগ ওঠে, অনেক শ্রমিক হাজার হাজার ডলার খরচ করেও প্রতিশ্রুত চাকরি পাননি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশে এই ইস্যুতে পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।
চিঠিতে আজমান বলেছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো পর্যালোচনা শেষে প্রত্যাহার করা হলে মালয়েশিয়ার মানবপাচারবিরোধী (টিআইপি) র্যাংকিং বজায় রাখা, এমনকি কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তিনি এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গঠনের আহ্বান জানান, যাতে পূর্বে বাতিল হওয়া অভিযোগগুলো পুনরায় উত্থাপন না করা হয়।
টিআইপি র্যাংকিংয়ে নিচের স্তরে থাকলে দেশটিকে মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা তহবিল থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থার ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও জটিলতার মুখে পড়তে পারে।
মালয়েশিয়ার চিঠি সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূইয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় তদারকির দায়িত্বে থাকা ক্যাবিনেট সদস্য আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিটির জবাব দিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি ব্লুমবার্গ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে শ্রমবাজারে লোক নিয়োগের বিষয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন এবং মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিমের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ড. আসিফ নজরুল যৌথ সভায় মিলিত হবেন।