X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বোরো ধানে ‘ব্লাস্ট’, বিপাকে কালীগঞ্জের কৃষকরা

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
১৮ এপ্রিল ২০১৮, ১০:০৩আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৮, ১০:৪৩

বোরো ধানে ‘ব্লাস্ট’, বিপাকে কালীগঞ্জের কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ব্রি-২৮ ও নতুন জাতের ব্রি-৬৩ ধানে ছত্রাকজনিত ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ক্ষেতের ধানের শীষ শুকিয়ে চিটে হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এই দুই জাতের ধান চাষ করে এখন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ এবং ১ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে নতুন ব্রি-৬৩ জাতের ধানের চাষ হয়েছে।

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে ব্রি-৬৩ জাতের ধানের চাষ করেছেন। ধানের শীষও বের হয়েছে। কিন্তু নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তার ক্ষেতের বেশিরভাগ ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে চারবার স্প্রে করেও তিনি কোনও ফল পাননি। এখন তিনি কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

তার পাশ্ববর্তী বেলে পাড়া গ্রামের নিখিল কুমার জানান, তার ১৫ কাঠা জমিতে ব্রি-৬৩ জাতের ধান শীষ বের হওয়ার পর নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে প্রায় ৭৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

মল্লিকপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষি মুক্তার হোসেন ১৬ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানের শীষ বের হওয়ার পর তিনি ক্ষেতে গিয়ে দেখতে পান ধানের শীষগুলো পচে শুকিয়ে চিটে হয়ে গেছে। একইভাবে কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদ হোসেন ৬ বিঘা জমিতে নতুন জাতের ব্রি-৬৩ ধান চাষ করেছিলেন। তার ক্ষেতের প্রায় অর্ধেক ধানের শীষ নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে শুকিয়ে গেছে।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা সময়মতো ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিলে তাদের এমন ক্ষতি হতো না।

অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, এবার আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় আগে থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, মসজিদ ও লোকসমাগম হয় এমন স্থানে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ছত্রাক প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। বোরো ধানে ‘ব্লাস্ট’, বিপাকে কালীগঞ্জের কৃষকরা
আরও জানা গেছে, কিছুদিন আগে হওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে এই রোগ ছড়িয়েছে। এই রোগে আক্রান্তের লক্ষণ হলো প্রথমে শীষের গোড়ার সংযুক্ত স্থানে পানি জমে। এরপর সেখানে জীবাণু আক্রমণ করে কালচে বাদামি দাগ তৈরি করে। পরবর্তীতে আক্রান্ত শীষের গোড়া পচে যায়। খাবার শীষে পৌঁছাতে পারে না। ফলে শীষ শুকিয়ে দানা চিটা হয়ে যায়। শীষের গোড়া ছাড়াও যেকোনও স্থানে এ রোগ আক্রমণ করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ সহজে শনাক্ত করা যায় না। আক্রান্ত হয়ে পড়লে ওষুধ প্রয়োগ করলেও কার্যকরভাবে রোগ দমন করা সম্ভব হয় না। সেজন্য তারা সময়মতো ছত্রাকনাশক ওষুধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে বিকালে ৫/৭ দিনের ব্যবধানে দুই বার স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। যেসব কৃষক তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আগাম ব্যবস্থা নিয়েছেন তাদের কোনও সমস্যা হয়নি বলে কৃষি কর্মকর্তা দাবি করেন।

উপজেলার বলরামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ছয় বিঘা জমিতে ব্রি-৬৩ জাতের ধান চাষ করেছেন। রোপণের কিছুদিন পর তিনি দেখতে পান তার ধান গাছ মাঠের সবার থেকে ভালো হয়েছে। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার কয়েকদিন পর মাঠে গিয়ে তিনি দেখতে পান বেশ কিছু ধানের শীষ পচন ধরে শুকিয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু জমিতে অর্ধেক ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে। এরপর কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পর নতুন করে আর পচন ধরেনি।

উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক সুমন হোসেন বলেন, চলতি বছর আমি সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এরমধ্যে তিন বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। গত এক সপ্তাহ আগে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হওয়ার পর মাঠে গিয়ে দেখি ধানের শীষে পচন ধরেছে। এর কিছুদিন পর দেখি তিন বিঘা জমিতে অর্ধেকের বেশি ধানের শীষে পচন ধরেছে। তিনি ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পর পচন আর বাড়েনি বলে জানান। একই গ্রামের দুদু মিয়া, তারিফ হোসেন, মুকুল সাহা ও আজহার আলীর ব্রি-২৮ ও ৬৩ জাতের ধানের শীষ নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম চলতি বোরোর বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আর কয়েকদিন পরেই কৃষকরা ধান কাটা শুরু করবেন। মূলত দিনে গরম আর রাতে শিত থাকায় ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। এছাড়া জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধে আগে থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, মসজিদ ও লোকসমাগম হয় এমন স্থানে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন।’ এই উপজেলায় মাত্র দেড় হেক্টর জমির ধান এই রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ