X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাছে স্বপ্ন বুনছেন নারীরা

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা‌
০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০০

‘স্বামীর টাকার হিসাব দিতে হয়। কিন্তু নিজে উপার্জন করলে হিসাব দিতে হবে না। নিজের আয়ের টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারবো। সেইসঙ্গে সঞ্চয়ও করতে পারবো।’ নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার কথা এভাবেই জানালেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কল্পনা বিশ্বাস। সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির স্বপ্ন বুননের কথাও বললেন কল্পনা।

কল্পনা বিশ্বাসের মতো স্বপ্ন বুনছেন ডুমুরিয়ার আরও ১১ নারী। মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী। কয়েক বছর আগেও তারা ছিলেন উপজেলার জেলেপাড়ার অনগ্রসর নারী। এখন সবাই নারী উদ্যোক্তা।

এসব নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডুমুরিয়ার জেলেপাড়া এখন শুধু নামেই জেলেপাড়া। এখানের পুরুষরা এখন মাছ ধরতে সাগর কিংবা নদীতে যান না। কারণ মাছ ধরার জালসহ অন্যান্য উপকরণ নেই। দাদন নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে ধারদেনা কমছিল না তাদের। সংসার চালানো হয়ে পড়েছিল দুষ্কর। ফলে এখন তারা দিনমজুরি ও শ্রমিকের কাজ করেন। জেলেপাড়ার বাসিন্দা হলেও এখন আর তাদের মাঝে জেলের ছাপ নেই। 

জেলেপাড়ার নারীরা এখন দলবদ্ধ হয়ে ঘেরে মাছ চাষ করেন। এতে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাকিরাও আশার আলো দেখছেন। মাছ চাষে সফলতা অর্জনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টিতে নতুন স্বপ্ন বুনছেন তারা। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সমাজভিত্তিক মাছ চাষ শুরু হয়েছে। অধিদফতরের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জেলেপাড়ার নারীরা। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা মাছ চাষ করে চমক দেখিয়েছেন।

জেলেপাড়ার মাছ চাষি স্বপ্না রানী বলেন, ‘শোলগাতিয়া এলাকায় হাজারের বেশি চিংড়ি ঘের আছে। কিন্তু মৎস্য অধিদফতরের অনুপ্রেরণায় এই প্রথম নারীরা একটি ঘের করেছি। সফল হতে পেরে আনন্দ লাগছে খুব।’

একই প্রকল্পের মাছ চাষি সুমতি বিশ্বাস বলেন, ‘মাছ চাষের জন্য ঘর থেকে বের হতে পেরেছি। অনেক আশা নিয়ে মাছ চাষ শিখেছি। সফল হতে পেরে ভালো লাগছে। নিজেরা এখন স্বাবলম্বী।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘কমিউনিটি-বেইজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় গত মে মাসে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনগ্রসর নারীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতিয়া জেলেপাড়ার ১২ নারী অংশ নেন। প্রশিক্ষণের আলোকে মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধানে ওই ১২ নারীর সঙ্গে এলাকার আরও ১৩ পুরুষকে নিয়ে ‘রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিও’ সমিতি গড়ে তোলা হয়। প্রত্যেক সদস্য মাসে ২০০ টাকা করে চাঁদা ও প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। এরপর ৪৫ হাজার টাকা জমা করেন। জুন মাসে মাছ চাষের জন্য বছরে ৭০ হাজার টাকা হারে চুক্তিতে হরি নদীর চরে এক একর জমি লিজ নেন। 

তখন মৎস্য অফিস থেকে ওই সমিতিকে মাছ চাষের জন্য দুই লাখ সাত হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। ততদিনে লিজ নেওয়া জমি মাছ চাষের জন্য তৈরি করে গত ২০ জুন সেখানে সাড়ে ১৫ হাজার বাগদা ও ২০ হাজার ৮০০ গলদা চিংড়ির রেণুসহ বিভিন্ন মাছ ছাড়া হয়। সম্প্রতি ওই খামার থেকে ৩০ হাজার টাকার বাগদা বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। নারীদের তত্ত্বাবধানে মাছ চাষের প্রকল্পটি এলাকাবাসীর মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছে। এখান থেকে কয়েক লাখ টাকার মাছ বিক্রির আশা করছেন তারা।

জেলেপাড়ার নারীরা এখন দলবদ্ধ হয়ে ঘেরে মাছ চাষ করেন

রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিও’র সভাপতি মুক্তা বিশ্বাস বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় নারীদের প্রচেষ্টায় মাছ চাষ কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আমাদের সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে চলে। আশা করছি, এই সমিতির মাধ্যমে নারীরা তাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন।’

ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে রুদাঘরায় বাগদা চাষ প্রকল্পে দুই লাখ সাত হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদফতর। ওই প্রকল্পে তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে সেখান থেকে লাভ আসতে শুরু করেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের পাশাপাশি উপজেলার ওড়াবুনিয়ায় নারীদের গলদা চাষ প্রকল্প চালু হয়েছে। সেখানেও নারীরা সফল হবেন আশা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আকড়ায় নারীদের মাছের জাল বোনা ও নলঘোনায় মাছ চাষ ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রকল্প চালু করা হবে।’

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘মাছ চাষে নারীরা সফল হয়েছেন—এটি অত্যন্ত শুভ ইঙ্গিত। তাদেরকে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ চাষের উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
আলুর প্রত্যাশিত দাম পেয়ে খুশি চাষিরা
সর্বশেষ খবর
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা