X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার আদলে খুলনায় একাধিক শহীদ মিনার

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩০আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩০

ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে খুলনায় একাধিক শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ভাষাশহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা জাগ্রত করতে এসব শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

এর মধ্যে শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের শহীদ মিনার, পাইকগাছা বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ও কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরের শহীদ মিনার উল্লেখযোগ্য। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ব্যতিক্রমী আদলে তৈরি।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে শহীদ হাদিস পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। তত্কালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ভাষাসৈনিক গাজী শহীদুল্লাহ এই শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। পৌরসভার অর্থায়নে এটি তৈরি করা হয়। গত ৪০ বছর ধরে এখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছিলেন খুলনাবাসী। কিন্তু শহীদ মিনারটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় হাদিস পার্কে নতুন একটি শহীদ মিনার করা হয়। সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার আধুনিকায়নের প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০১২ সালে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় আট কোটি ৪১ লাখ টাকা। শহীদ মিনারটির আয়তন ছয় হাজার ৮৬০ বর্গফুট। শহীদ মিনারে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা যাতে সহজে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সেজন্য একটি র‌্যাম্প তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালের জুনে।

ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, ‘হাদিস পার্কের শহীদ মিনারটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি। এটি দেখতে অনেক সুন্দর। আশপাশের পরিবেশও চমৎকার।’

খুলনা আহসানউল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থী ইয়ামিন আহমেদ বলেন, ‘হাদিস পার্কের শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার। যেটি দেখতে খুবই সুন্দর।’ 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার

১৯৬৭ সালে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৬ সালে এটিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) করা হয়। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। বছরের পর বছর ক্যাম্পাসের বটতলায় স্থাপিত প্রতীকী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। ২০১৬ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা মনোজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘এক কোটি টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ২২২ বর্গমিটার এলাকায় ১১.৯৮ মিটার উচ্চতার শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে এটি নির্মিত।’ 

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরের শহীদ মিনার

তিনি বলেন, ‘শহীদ মিনারে পাঁচটি লেভেল এবং একুশে ফেব্রুয়ারিকে সম্মান জানাতে ২১টি ধাপ রয়েছে। পঞ্চম লেভেলে রয়েছে শহীদ মিনারের মূল বেদি। মিনারে রয়েছে লাল সূর্য। শহীদ মিনারের বিভিন্ন লেভেলে গাছ ও সবুজ ঘাস রাখা হয়েছে। যা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেছনে তৈরি করা হয়েছে লেক। ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি স্থাপনাটি নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেম জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ 

পাইকগাছায় শহীদ মিনার

পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন বলেন, ‘লক্ষ্মীখোলা কলেজিয়েট স্কুলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। বর্তমানে মিনহাজ বাজারে একই আদলে আরও একটি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ চলছে। এটাতেও একই খরচ হচ্ছে।’

খুলনা মেডিক্যাল কলেজের শহীদ মিনার

২০১৪ সালের শেষের দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ভবনের সামনে পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ এই শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার

কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘এটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার। যেকোনো মেডিক্যাল কলেজে নির্মিত শহীদ মিনারের চেয়ে বড়।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নকশা ব্যতিক্রম। এটির দৈর্ঘ্য ৩৮ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৩২ ফুট। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত নকশা প্রতিযাগিতার আহ্বায়ন করা হয়। ১৭টি নকশা জমা পড়েছিল। পরে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯৫ ব্যাচের চার শিক্ষার্থীর ডিজাইন নির্বাচন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৮ জুন শহীদ মিনার স্থাপন সংক্রান্ত প্রস্তাবের প্রশাসনিক অনুমােদন দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর শহীদ মিনারের নির্মাণকাজের উদ্বােধন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম নজরুল ইসলাম। 

প্রথমপর্যায়ের কাজ শেষে ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের উদ্বােধন করা হয়। ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আশপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেন।

/এএম/
সম্পর্কিত
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
তাসখন্দে শহীদ মিনার স্থাপনের প্রস্তাব
নারী দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উঠে পড়লো রেললাইনে, ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…