X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধ কেটে লবণ পানি কৃষিজমিতে, নষ্ট হচ্ছে ২০০ বিঘার ধান

আবুল হাসান, মোংলা
১৪ মার্চ ২০২৩, ১১:২৭আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৮

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অন্যতম নদীবেষ্টিত উপজেলা রামপাল। ৩৩৫ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলায় পশুর, মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ ৫০টির বেশি নদী-খাল রয়েছে। এসব নদী ও খালের পানি লবণাক্ত হওয়ায় এই এলাকার বেশিরভাগ ধানের জমি অনাবাদি থাকতো। দীর্ঘদিন পরে পেরিখালি ও রাজনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এ বছর ইরি মৌসুমে কিছু নদী ও খাল আটকে মিষ্টি পানির সংস্কার করে ধান চাষ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু চিংড়ি মাছের পোনা ছাড়ার সময় হওয়ায় প্রভাবশালী ঘের মালিকরা খালের বাঁধ কেটে ধানের জমিতে লবণ পানি প্রবেশ করাচ্ছেন। এই লবণ পানিতে পচে যাচ্ছে কৃষকের ২০০ বিঘার ধান। এতে ৫০ লাখ টাকার উপরে ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছেন দুই শতাধিক কৃষক।

১৫-২০ দিন পরে লবণ পানি প্রবেশ করালে ধানের ক্ষতি হতো না বলে দাবি কৃষকদের। ১৫ দিনের সময় পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুফল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডের কালেখারবেড় এলাকার মধ্য থেকে বয়ে যাওয়া ঘরের খালের বাঁধ কেটে মৎস্য ঘেরে পানি ঢুকিয়েছেন জুলু হাজীসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। 

শুধু কালেখারবেড় নয় রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া, রনজয়পুর ও আড়ুয়াডঙ্গা এলাকায়ও একইভাবে ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এসব এলাকার ঘের ব্যবসায়ীরা এখন খালের বাঁধ কেটে লবণ পানি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিয্গে কৃষকদের।

কালেখারবেড় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সবিতা হাসলাদার বলেন, ‘গরু বিক্রি করে এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ১৫-২০ দিন পর ধান ঘরে তুলতে পারতাম। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধটি কেটে দেওয়ায় লবণ পানি ঢুকে ধান গাছ সব মরতে শুরু করেছে। অনেক অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি।’

একই গ্রামের কৃষক হুমাউন কবির বলেন, ‘কৃষিবিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। তখন লবণ পানি ঠেকাতে সবার সম্মতি নিয়ে কালেখার খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘেরে লবণ পানি প্রবেশ করাতে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁধটি কেটে দেন। বাঁধটি কাটার আগে চেয়ারম্যান, কৃষি অফিসার ও ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি। ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য মাত্র ১৫ দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘উপজেলার অন্তত ৩০টি খাল আটকে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। তাতে কিছু হয় না, আমরা শুধু কয়েক দিনের জন্য আটকে ধান চাষ করেছিলাম এটাই আমাদের অপরাধ।’

এ বিষয়ে ঘের ব্যবসায়ী জুলু হাজী বলেন, ‘এখন চিংড়ি মাছের পোনা ছাড়ার সময়। খাল আটকে রাখলে আমাদের ক্ষতি। এজন্য বাঁধ কেটেছি।’

রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতানা পালভিন বলেন, ‘ধান চাষের জন্য সব কৃষকরা একমত হয়ে খাল আটকে ধান চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু ঘের ব্যবসায়ী পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করতে চান। এ কারণে মাছ চাষিরা বাঁধটি কেটে দিয়েছেন। মানবিক কারণে চাষিদের ১৫ দিন সময় দেওয়া উচিত ছিল।’

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, ‘কাউকে সরকারি খাল আটকে রাখার অনুমতি দিতে পারি না। তবে ঘের ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মাঝে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা সমাধানের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সমাধান করবেন।’

/আরআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা