মোংলা বন্দরের সক্ষমতার বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হচ্ছে আধুনিক মানের ছয়টি জলযান। বন্দরের কাজের সুবিধার জন্য ৭৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে এসব জলযান। ছয়টি জলযানের মধ্যে এ বছরের শেষে বন্দরে আসবে হংকংয়ের চিউলি শিপইয়ার্ডে নির্মিত দুটি টাগবোট। বাকি চারটি জলযান আসবে আগামী বছরের জুনে। তবে সেগুলো বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সার্স অ্যান্ড রেসকিউ ভ্যাসেল তৈরি হচ্ছে খুলনা শিপইয়ার্ডে, আর বাকি তিনটি তৈরি হচেছ নারায়াণগঞ্জের কর্ণফুলী শিপইয়ার্ডে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) কমান্ডার মোমেন উল্লাহ মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান। বলেন, আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জলযানগুলো কেনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এ কাজের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ছয়টি জলযান হচ্ছে- একটি পাইলট মাদার ভ্যাসেল, দুটি টাগবোট, একটি সার্স অ্যান্ড রেসকিউ ভ্যাসেল (উদ্ধারকারী জাহাজ), একটি সার্ভে অ্যান্ড রিসার্স ভ্যাসেল এবং একটি বয়লিং ভ্যাসেল। এর মধ্যে পাইলট মাদার ভ্যাসেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকায়। এ জাহাজটি বন্দরে যুক্ত হলে মাদার ভ্যাসেল থেকে পাইলট ও বিদেশি নাবিকদের জাহাজ থেকে নদীর তীরে আনা নেওয়া আরও সহজ হবে। এছাড়া জাহাজটির মাধ্যমে প্রয়োজনে বন্দরের নিরাপত্তার জন্য টহল জোরদার করা যাবে।
এ বছরের শেষের দিকে বন্দরে যুক্ত হতে যাওয়া টাগবোট দুটি কেনা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়। টাগবোট দুটি আসার পর বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ মুরিং (ভেড়াতে এবং ঘোরাতে) করা সহজ হবে। এছাড়া এ বোটের মাধ্যমে মাদার ভ্যাসেলকে (বিদেশি জাহাজ) প্রপেলার বন্ধ অবস্থায় টেনে আনা এবং দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ টেনে নেওয়া ও অন্যান্য জাহাজের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবে।
আগামী বছরে বন্দরে যুক্ত হতে যাওয়া উদ্ধারকারী জাহাজ সার্স অ্যান্ড রেসকিউ ভ্যাসেল কেনায় ব্যয় হচ্ছে ১১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আধুনিক এ জাহাজ দিয়ে সমুদ্রে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ খুঁজে বের করা এবং নাবিক ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্ধার করা যাবে। এছাড়া এ জাহাজের সাহায্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত জাহাজের ক্ষতি কমবে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান কর্মকর্তা জহিরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বন্দর সংশ্লিষ্ট গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে সার্ভে অ্যান্ড রিসার্স ভ্যাসেল। এ জাহাজটিও আগামী বছর মোংলা বন্দরে যুক্ত হবে। এটি কেনায় ব্যয় হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। জাহাজটির মাধ্যমে নদী ও সমুদ্রে বিভিন্ন ধরনের জরিপের কাজে এবং সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে গবেষণার কাজ করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, বন্দর চ্যানেলে বয়া স্থাপন ও বিভিন্ন সিগন্যাল দেওয়ার জন্য ১২৬ কোটি ৩৭ লাখ ব্যয়ে কেনা হয়েছে অত্যাধুনিক বয়লিং ভ্যাসেল। এটি দিয়ে স্বল্প সময়ে চ্যানেলের উপযুক্ত স্থানে সহজে বয়েল করা যাবে। এটিও আগামী বছর মোংলা বন্দরে যুক্ত হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব জাহাজ বন্দরে যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুন বেড়ে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরে দুটি এবং আগামী বছর চারটি জলযান মোংলা বন্দরে যুক্ত হবে।’