যশোরের দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মুকুলের পরিবার এবং যশোরের সাংবাদিক সমাজ। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুলের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়। সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, লেখক গবেষক বেনজীন খান, সাংবাদিক মুকুলের ভাই দৈনিক রানারের সম্পাদক কবিরুল আলম দিপু, প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান কবীর, সাইফুর রহমান সাইফ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, সরোয়ার হোসেন ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম আর খান মিলন প্রমুখ।
আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর অতিবাহিত হলেও বিচার শেষ হয়নি। এত বছর পরও চিহ্নিত হয়নি হত্যাকারীরা। অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানাই।’
এত বছরেও হত্যার বিচার না হওয়াটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের উল্লেখ করে সাংবাদিক সাইফুল আলমের মুকুলের ভাই কবিরুল আলম দিপু বলেন, ‘আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই। দ্রুত মামলার কার্যক্রম শুরুর দাবি জানাই।’
এর আগে সকালে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক মুকুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন সাংবাদিকরা। এ উপলক্ষে প্রেসক্লাব, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল শোক মিছিল, মুকুলের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়া যাচ্ছিলেন। পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। এ ঘটনার পরদিন তার স্ত্রী হাফিজা আক্তার কারও নাম উল্লেখ না করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। একপর্যায়ে আইনি জটিলতায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামের আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে ২৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ সময় এক আসামি ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এম ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এক আসামির আবেদনের কারণে মামলাটির যুক্তিতর্ক করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টে আবেদনের নিষ্পত্তির পর সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হবে।’
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, ‘দৈনিক রানার সম্পাদক হত্যার বিচার না হওয়াটা দুঃখজনক। এতে হত্যাকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে পড়ছে। তাই আশা করবো, সরকার সাংবাদিক হত্যার সঠিক বিচারকাজ দ্রুত শুরু করবে।’