ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর তা গণনা করতে করতে বেরিয়ে যান স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন হিরা (৪০)। স্কুলের এক লাখ টাকা এভাবে নিয়ে চলে যাওয়ার পর তা আর ফেরত দেননি তিনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ব্যর্থ হয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমদাদ হোসেন।
এই ঘটনায় সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে সভাপতির বিরুদ্ধে বাঘারপাড়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এদিন দুপুরে টাকা উত্তোলন করতে উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। যৌথ স্বাক্ষরে তিন লাখ টাকা উত্তোলনের পর তারা দুজনে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কক্ষে বসে টাকা গুনছিলেন। ওই সময় সভাপতির ফোনে একটি কল আসে। এরপর এক লাখ টাকা গণনা ও ফোনে কথা বলতে বলতে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান তিনি। চেষ্টা করেও সেই টাকা উদ্ধার করতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। অবশেষে ওই টাকা উদ্ধারে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আনসার আলী মোল্যার ছেলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন হিরা। তিনি নারিকেলবাড়িয়া কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক এবং ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক। একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এমদাদ হোসেন।
লিখিত অভিযোগে এমদাদ হোসেন উল্লেখ করেন, প্রায় তিন মাস আগে নারিকেলবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে পিবিজিএসআই স্কিমের আওতায় পাঁচ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ আসে। ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে দুই লাখ এবং স্কুলের সাধারণ তহবিল থেকে এক লাখ (সর্বমোট তিন লাখ) টাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ব্যাংক ম্যানেজারের কক্ষে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওই তিন লাখ টাকা গণনা করছিলেন। ওই সময় গিয়াস উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে এবং তিনি স্কুলের এক লাখ টাকা গুনতে গুনতে ম্যানেজারের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
প্রধান শিক্ষক জানান, এর কিছু সময় পর তিনি সভাপতিকে ফোন দিলে ওপাশ থেকে বলা হয়, দশ মিনিট পরে আসছেন। ১০ মিনিট পরে আবার ফোন করা হলে তিনি জানান, একটা সালিশে আছেন শেষ করেই টাকা নিয়ে স্কুলে আসছেন। এরপরও বিদ্যালয়ে না আসায় তার ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বিকালে বিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকে তার বাড়িতে পাঠানো হয়। তিনি তাকে শুক্রবারে টাকা দেবেন বলে জানান। একইসঙ্গে তাকে জানান, যদি অন্য কাউকে এ ব্যাপারে বলা হয় তাহলে তিনি আর টাকা দেবেন না। ওই দিন বিকালে ফের সভাপতিকে কল করে বিদ্যালয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন, তিনি শুক্রবারে টাকা দেবেন। সঙ্গে এ-ও জানান, অন্য কাউকে এ বিষয়ে বলা হলে তিনি আর টাকা ফেরত দেবেন না।
এমদাদ হোসেন বলেন, ‘উপায়ন্তর না পেয়ে বিদ্যালয়ের টাকা উদ্ধারে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এখনও পর্যন্ত পুলিশ এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে পারিনি। খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি।’
এ ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিনের ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাঘারপাড়া থানার ওসি শাহাদত হোসেন বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’