গতবারের মতো এবারও যশোরের চৌগাছায় শুরু হয়েছে খেজুর গুড়ের মেলা। তিন দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় চৌগাছা উপজেলা পরিষদের বৈশাখী মঞ্চের সামনে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো এই মেলা বসেছে। এতে পাটালি ৬০০ ও সাধারণ গুড় ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনেও বিক্রি হয়, সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে কুরিয়ার খরচ বহন করতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি প্রথমবার গুড় মেলার আয়োজন করা হয়। তখন মেলায় দুই শতাধিক গাছি নিজেদের উৎপাদিত খেজুরের গুড় ও পাটালি নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তবে এবারের মেলার উদ্বোধনী দিনে গাছিদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি।
মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের বৈশাখী মঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহার সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী, চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, খেজুর গাছ গবেষক সৈয়দ নকীব মাহমুদ, অধ্যাপক মিজানুর রহমান মধু, সহকারী কমিশনার গুঞ্জন বিশ্বাস এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুবাশ্বির হোসাইন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং রস ও গুড়কে অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে প্রসার ঘটাতে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা প্রথমবারের মতো গুড়ের মেলার আয়োজন করেন। তখন বলা হয়েছিল, প্রতি বছর বাংলা সনের ১ মাঘ থেকে মেলা হবে। তবে চলতি বছর সংসদ নির্বাচনের কারণে সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়।
মেলায় অংশ নেওয়া উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাদেখানপুর গ্রামের জায়েদ আলী ২৭ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটেন ও গুড় তৈরি করেন। গতবার মেলায় স্টল দিয়েছিলেন এবং বিক্রি ভালো হয়েছিল। এবারও স্টল দিয়েছেন। পাটালি ৬০০ আর সাধারণ গুড় ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
জায়েদ আলী বলেন, ‘এবার মেলায় এই দামেই গুড় বিক্রি করছি আমরা। অনলাইনেও বিক্রি করি, সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে কুরিয়ার খরচ বহন করতে হবে।’
স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের হাসান আলী জানান, তিনি চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় পাটালি গুড় পাঠান। অনলাইনে অর্ডার নেন। গতবার মেলায় বেচাকেনায় তৃতীয় হয়েছিলেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে নগদ টাকা ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছিল। এবারও তিনি মেলায় অংশ নিয়েছেন।
মেলায় প্রথমদিন ১২০ কেজি গুড় নিয়ে এসেছেন হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর-চাকলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। গতবার মেলায় অংশ নিতে ১৫ দিন আগে থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। এবার গত শুক্রবার আয়োজক কমিটি থেকে ফোন করা হয়। এজন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারিনি। ফলে মেলায় গাছি কম এসেছেন। গাছি কম এলে মেলা জমজমাট হয় না।’
পাতিবিলা থেকে গুড় নিয়ে আসা গাছি বাবলু রহমান বলেন, ‘গত বছর ইউএনও গুড়ের মেলা শুরু করেছিলেন। আমরা ভালো বেচাকেনা করেছিলাম। এবারও এসেছি। মোটামুটি ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
অংশগ্রহণকারী ও আয়োজকরা জানান, মেলার দ্বিতীয় দিন থেকে গাছির সংখ্যা বাড়বে। এদিন অতিথি হিসেবে থাকবেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। বুধবার সমাপনী দিনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে।
মেলায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং চৌগাছা পৌরসভার জন্য একটি করে স্টল বরাদ্দ রাখা হয়। স্থানীয় মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী এবং একটি সংস্থার পক্ষ থেকে খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের পিঠাপুলি দুটি স্টল ছাড়াও স্কাউটের সদস্যরা মেলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করছেন।