X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক এশিয়া থেকে এক গ্রাহকের ৬৩ লাখ টাকা গায়েব

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৫আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৫

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংক থেকে ৬৩ লাখ টাকা গায়েব করে দিয়েছে। ওই আউটলেটের দায়িত্বে থাকা ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সদস্য ও কোটচাঁদপুর এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিবুল কবির রাজিব ও তার ভাই মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই টাকা গায়েবের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক তদন্তে নেমেছে।

ভুক্তভোগী কোটচাঁদপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদ মন্ডলের ছেলে কুয়েত প্রবাসী রোকনুজ্জামান রোকন জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে কুয়েতে থাকেন। ২০১৯ সালে তিনি দেশে এসে কোটচাঁদপুর ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট আউটলেটে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে কুয়েত চলে যান। যার হিসাব নং ১০৮৩৪৪৪০০৬১০৬। তখন আউটলেটের দায়িত্বে ছিলেন কোটচাঁদপুর উপজেলার মৃত কাওসার মন্ডলের ছেলে মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পরে দেশে এসে ২০২০ সালের ২ মার্চ আউটলেটে ৪০ ও ১০ লাখ টাকার আলাদা দুটি মাসিক মুনাফা সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। যার দুটি হিসাব নং- ১০৮২৭৪৪০০০০০৮ ও ১০৮২৭৪৪০০০০০৯। এ দুটি হিসাবের মেয়াদ পূর্তির তারিখ ছিল ২০২৩ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ সময় বলা হয়েছিল প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেবে ব্যাংক। সে অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট গুলোতে তিন বছরে লভ্যাংশ ও মূলধনসহ প্রায় ৬৩ লাখ টাকা জমা হওয়ার কথা। অথচ প্রবাসী রোকন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তিনি দেশে ফিরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলে তিনি জানতে পারেন, প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার সমুদয় টাকা অ্যাকাউন্ট তিনটি থেকে গায়েব হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনে, ঝিনাইদহ শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

রোকন এ প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে খুব কষ্টে অর্জিত টাকাগুলো তিল তিল করে জমিয়েছিলাম। বিশ্বাস করে টাকাগুলো ব্যাংকে আমানত রেখেছিলাম। এখন দেখছি ব্যাংকেও আমানতের টাকা খেয়ানত করা হয়- ব্যাংক গ্রাহকরা বিশ্বাস করবে কারে? এখন চরম বিপদে পড়েছি। আউটলেটের সঙ্গে ব্যাংক এশিয়ার কিছু কর্মকর্তা জড়িত। তা না হলে আমি প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার মুনাফা সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উঠলো কী করে?

ব্যাংক এশিয়া ও আউটলেটের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে ব্যাংক এশিয়ার আউটলেটের দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলাম দায়িত্বভার (ব্যাংকের অনুমতিক্রমে) তার আপন ভাই ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ সদস্য রাজিবুল কবির রাজিবের কাছে দেন। এরপর মনিরুল ইসলাম ডাচ বাংলা ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখায় যোগদান করেন।

পরে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে আউটলেটের দায়িত্বে থাকা রাজিব প্রবাসে থাকা রোকনুজ্জামান রোকনের মাসিক মুনাফা সঞ্চয়ী হিসাব দুটি ভেঙে সমুদয় টাকা প্রবাসী রোকনের আরেকটি সঞ্চয়ী হিসাব নং-১০৮৩৪৪৪০০৬১০৬-এ নিয়ে আসেন। এই হিসাব থেকে নিজের দুটি হিসাব নম্বরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করেন রাজিব।

অভিযুক্ত রাজিব

বাকি টাকা আরও ২-৩ গ্রাহকের হিসাব নম্বরে নিয়ে আসেন। পরে ওই গ্রাহকদের হিসাব থেকেও টাকাগুলো তুলে নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, হিসাব খোলার শুরুতেই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে আঙুলের ছাপ জলিয়াতি করা হয়েছে। যে কারণে পূর্বে আউটলেটের দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলাম (বর্তমান ডাচ বাংলা ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখায় কর্মরত) ও তার ভাই ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ সদস্য রাজিবুল কবির রাজিবকেই এই জালিয়াতির দায় নিতে হবে। মনিরুল ইসলাম কোনোভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। কেননা তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আঙুলের ছাপ জালিয়াতি করা হয়েছে। পরে তার ভাই রাজিবুল কবির রাজিব আউটলেটের দায়িত্বে এসে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা উদ্ধারে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি রাজিবকে নিয়ে বসেন। সে সময় রাজিব টাকা উঠিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে এবং সময় নেন। এরপর কয়েক দফা সময় নিয়েও টাকা ওই একাউন্টে জমা দেননি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক এশিয়া ঝিনাইদহ শাখার ম্যানেজার সাইফুর রহমান রাজিবকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখানেও অপরাধের কথা স্বীকার করলেও আজ পর্যন্ত টাকা উদ্ধার হয়নি।

ব্যাংক এশিয়ার ঝিনাইদহ শাখার ম্যানেজার সাইফুর রহমান বলেন, গ্রাহক প্রবাসী রোকনুজ্জামানের আবেদন আমরা পেয়েছি। আমাদের হেড অফিসের কর্তারা বিষয়টি জেনেছেন। জালিয়াতির বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার। টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ নিচ্ছে হেড অফিস।

উপজেলার এলাঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান বলেন, টাকা জালিয়াতির বিষয়টি রাজিব স্বীকার করে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। অথচ এখন সে বলছে টাকা আমি দিতে পারবো না। পারলে ব্যাংক আমার বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা আদায় করে নিক। এখন আমি আর কী করতে পারি?

এদিকে ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ায় রাজিব আত্মসাৎ করা টাকা নিয়ে দুবাই পাড়ি জমানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। যেকোনও সময় দেশ ত্যাগ করতে পারে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সব ব্যাংকের আউটলেটের সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে ভয় কাজ করছে। সে কারণে গ্রাহকরা আউটলেটের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে টাকা আত্মসাৎকারী রাজিব ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারসহ দ্রুত ভুক্তভোগীর সব টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছে।

/এফআর/
সম্পর্কিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
পিনাকীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
ফার্নিচার কারখানায় ৬০০ বস্তা চিনি মজুত
সর্বশেষ খবর
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
রাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
‘জেসির অভিজ্ঞতা লিগে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
‘জেসির অভিজ্ঞতা লিগে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বিটিসিএল কর্মচারীদের ‘লাগাতার অবস্থান’
চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বিটিসিএল কর্মচারীদের ‘লাগাতার অবস্থান’
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ