অপহরণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার ঘটনায় করা মামলায় খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক রাকিবুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিকালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত আজই জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন। এজন্য তাকে বিকালে থানায় আনা হয়েছে।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, সোনাডাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার ২ নম্বর আসামি নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে দুপুরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জেলা কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার এসআই রিবন খান পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিকালে তাকে সোনাডাঙ্গা থানায় আনা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সোনাডাঙ্গা থানায় দায়ের করা অপহরণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।’
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, বিয়ের কথা বলে এক নারীকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিল ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহম্মেদ। গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ওই নারী খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সামনে থেকে কয়েকজন লোক জোরপূর্বক তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। অভিযুক্তরা সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ সহচর ও অনুসারী। তাদের বাঁচাতে সাবেক এই মন্ত্রী অবৈধ প্রভাব বিস্তার করায় চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই ভুক্তভোগী নারীকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর খালাতো ভাই বাদী হয়ে গত ৯ অক্টোবর খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগ করেন। ট্রাইব্যুনাল ঘটনাটি তদন্ত করে সোনাডাঙ্গা থানাকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। গত ১৭ অক্টোবর ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহম্মেদসহ আট জনের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। এই মামলায় নারায়ণ চন্দ্রকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দশম জাতীয় সংসদে প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হন। গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। গত ৭ অক্টোবর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে তাকে আটক করেছিল বিজিবি। এরপর থেকে কারাগারে রয়েছেন।