যশোর শহরতলির পুলেরহাটে তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে মাহফিলে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় থানায় হওয়া সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সংখ্যার বড় রকমের হেরফের হয়েছে।
গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় ৫০০ জিডি হওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। তবে এর সবগুলো মাহফিলে খোয়া যাওয়া জিনিস প্রসঙ্গে নয় উল্লেখ করে পুলিশ বলছে, নিয়মিত জিডির সঙ্গে মাহফিল সংক্রান্তে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়টি মিলেমিশে গেছে। প্রকৃতপক্ষে মাহফিল সংক্রান্তে যে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়া যায়, সে বিষয়ে জিডির সংখ্যা ৮৪টি।
যশোর কোতোয়ালি থানায় প্রতিদিনই গড়ে ৮০টির মতো জিডি এন্ট্রি হয় বলেও জানিয়েছেন থানাটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘ওই তিন দিনে থানায় ৫০০ জিডি হয়েছে, এটা সত্য। তবে মাহফিলে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়ানোর ঘটনায় জিডি এন্ট্রি হয়েছে ৮৪টি।’
গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যশোর সদরের পুলেরহাটে আদ-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন। তিন দিনব্যাপী মাহফিলের শেষ দিন শুক্রবার রাতে বক্তব্য দেন খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আহমাদুল্লাহ। তাদের আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকায়। ওই মাহফিলে শত শত মানুষের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে, চুরির ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, মাহফিলের মাঠ থেকে হাতেনাতে তাদের আটক করে শুক্রবার রাতে মাহফিলের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে তাদের চুরির ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতার দুজন হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার মিনারা আক্তার মীম (১৯) এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নবির হোসেনের মেয়ে রাবেয়া খাতুন (৪৫)।
কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রেফতার দুজন মূলত চুরির উদ্দেশ্যেই এই মাহফিলে এসেছিল।
একটি সূত্র জানায়, মাহফিলের তিন দিনে কয়েক জনের মোবাইল ফোন হারানোর তথ্য রয়েছে আয়োজকদের কাছে। তবে, সোনার গয়না হারানোর বিষয়ে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। শেষদিনে দুজনকে ধরে তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যান কয়েকজন নারী। ওই দুই নারী গয়না চুরি করেছে বলে তাদের অভিযোগ। পক্ষে-বিপক্ষে হট্টগোল শুরু হলে ওই দুজনকে পুলিশে দেওয়া হয়।
চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পরিচালক (মানবসম্পদ ও কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) তারিকুল ইসলাম মুকুল বলেন, এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনি বরং মাহফিলের দায়িত্বে থাকা রবিউল হক সাহেবের সঙ্গে কথা বলুন।
রবিউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মূলত ডেকোরেশনের দায়িত্বে ছিলাম। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন তাজ ভাই।
যোগাযোগ করা হলে নাসিরুল্লাহ খান তাজ বলেন, নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আমি অল্প সময়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলাম। আমার জানা মতে, চারটি মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার ঘটনা এখানে জানানো হয়েছিল। এরমধ্যে দুটি ফোন যার একটি বাটন এবং অপরটি অ্যান্ড্রয়েড; যেগুলো পাওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জমা দেওয়া হয়েছিল। বাটন ফোনটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিয়ে যান এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মালিক তার একজন প্রতিনিধিকে পাঠান। কিন্তু তার কাছে দেওয়া হয়নি। প্রকৃত মালিককে আসতে বলা হয়েছিল।
দুই নারীকে পুলিশের সোপর্দ করার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলেও জানান।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, দুই নারীকে আটক করার বিষয়টি মাহফিলে আসা নারীদের টেন্টে ঘটেছিল। তারাই (নারীরা) ওই দুজনকে পাকড়াও করেন এবং পরে পুলিশে দেওয়া হয়।