‘দুনিয়াটা বড্ড কষ্টের জায়গা বাবা। স্বামী নাই। ছেলেমেয়ে নাই। নাই নিজের বাড়িঘর। টাকার অভাবে খাওয়াতো দূরে থাক, অসুখ অইলে হাসপাতালে যাওয়ার শক্তিও নাই। ছয় মাস ধইরা বয়স্ক ভাতার জন্য সোলেমান চেয়ারম্যানরে ভোটারকার্ড আর ছবি দিয়া ঘুরতাছি। কাম অইতাছে না। বাঁচুম আর কদিন। বয়স্ক ভাতা পামু কিনা জানি না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদকে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ সদরের পরানগঞ্জের দিনমজুর মরহুম জহুর আলীর স্ত্রী সমরজান বেওয়া (৭৫)।
রবিবার (২৭ জুন) দুপুরে পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের চেয়ারম্যানের কামরার সামনের ভবনের খুঁটিতে হেলান দিয়ে মলিন চেহারায় বসে থাকতে দেখা গেছে সমরজানকে।
অপেক্ষা করছিলেন চেয়ারম্যান সোলেমান কবিরের আসার পথ চেয়ে। দুই ঘণ্টা বসেও পেলেন না চেয়ারম্যানের দেখা। তখন চোখেমুখে একগাদা ক্লান্তি নিয়ে কোনোমতে এ প্রতিবেদককে বলেন নিজের কষ্টের কথা।
সমরজান বললেন, গতকাল ঘরে চাল ছিল না। ভাত না খেয়েই ঘুমিয়েছিলেন। ভাতিজার বউয়ের কাছ থেকে ২০ টাকা ধার করে অটোরিকশা ভাড়া করে এসেছেন চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সকাল গড়িয়ে দুপুর। তখনও পেটে কিছু পড়েনি তার। কাগজপত্র জমা দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে মাস ছয়েক ধরে ধরনা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু এখনও ভাতার দেখা নেই।
সমরজান বললেন, ‘অসুখে পড়ে বহু আগেই দিনমজুর স্বামী মারা গেছেন। কোনও জায়গা-জমি রেখে যেতে পারেননি। লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যা পান তা দিয়ে চলছেন এতদিন ধরে। ঘর-বাড়ি না থাকায় ভাতিজার ঘরের বারান্দায় জায়গা হয়েছে ঘুমানোর। তবে খাওয়া জোটে না সবসময়। এখন বয়স হওয়ায় শরীরে বেঁধেছে নানা রোগও। মানুষের বাড়িতে সাহায্যের জন্য যাওয়ার শক্তিও থাকে না তার।’
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও চেয়ারম্যানের দেখা না পেয়ে অবশেষে সেদিন বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে সমরজান বেওয়াকে।
এবিষয়ে কথা হয় পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলেমান কবীরের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘সমরজান বেওয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ আবেদন করেছেন। শিগগিরই তার বয়স্কভাতার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
এদিকে বিভাগীয় সমাজসেবা পরিচালক তাহমিনা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘যথাযথ কাগজপত্রসহ আবেদন করলে কেউ ভাতার সুবিধা থেকে বাদ পড়বে না। সমরজান বেওয়াকে ভাতা পেতে তিনি সার্বিক সহায়তা করবেন বলেও জানান।’