মাসুদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে পরিবারটি অকূল পাথারে পড়েছে।
ভাগ্য পরিবর্তনে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মাসুদ মিয়া (৩৫)। সেখানে পাঁচ বছর অবস্থানের পর দেশে ফেরেন তিনি। তবে দেশে কোনও কাজে সুবিধা করতে না পেরে কাজ নেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর গাড়ি চালকের। তবে কনটেইনার ডিপোর আগুন শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে মাসুদের জীবন। উপার্জনক্ষম স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে এখন অকূল পাথারে পড়েছেন তার দুই সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মা।
মাসুদের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের বয়সিং গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মো. খলিলুর রহমানের ছেলে। মঙ্গলবার (৭ জুন) রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাসুদকে হারিয়ে এখন তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
স্বজনরা জানান, কৃষক দম্পতি খলিলুর রহমান ও জমেলা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মাসুদ। পড়াশোনায় মাধ্যমিক পেরোতে পারেননি, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পাড়ি জমান সৌদি আরবে। পাঁচ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন। এরপর ২০১৫ সালের দিকে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য ছুটে যান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোর একটি কোম্পানিতে গাড়িচালকের চাকরি নেন। সেখানে তিনি একসপ্তাহ দিনে এবং পরের সপ্তাহ রাতে ডিউটি করতেন। শনিবার রাতে সংঘটিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। এরপর তাকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান।
স্বজনরা জানান, মাসুদ ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। তার দুই বছর বয়সী একটা ছেলে এবং সাত বছর বয়সী একটা কন্যাসন্তান রয়েছে। স্ত্রী সুমি আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি সীতাকুণ্ডে ভাড়াবাসায় থাকতেন। দুই অবুঝ শিশুর লালনপালনসহ সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে, সে চিন্তায় দু'চোখে অন্ধকার দেখছেন মাসুমের স্ত্রী।
নিহতের মা জমিলা বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘আমার বাবারে কেউ আইনা দেও, আমি দেখমু। বাবা তো আর আমারে মা মা কইরা ডাকবো না, বাবা তো আর টেহা পাডাইবো না।’
নিহতের চাচা মোজাম্মেল হোসেন জানান, বিস্ফোরণের রাতেই নাকি মাসুদের সাপ্তাহিক নাইট ডিউটির শেষ দিন ছিল। মাসুদ পরিবারের বড় ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে পরিবারটি অকূল পাথারে পড়ে গেলো।
তিনি আরও জানান, মাসুদের লাশ আনার জন্য তার স্ত্রী ও ভাই চট্টগ্রাম আছেন। লাশ পৌঁছার পর বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মাসুদ মিয়া নামে সরিষাবাড়ীর এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার লাশ চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় পৌঁছানোর পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।