টানা কয়েকদিনের ঈদের ছুটিতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। আর এই সময়ে চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগের ড্রেসিংরুমে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর কেটে যাওয়া হাতের আঙুলে সেলাই ও ড্রেসিং করতে দেখা গেছে কর্মরত ওয়ার্ড বয়কে। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক কিংবা স্টাফ নার্স কাউকে দেখা যায়নি।
ঈদুল আজহার দিন শনিবার (৭ জুন) রাত সোয়া ৮টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগের ড্রেসিংরুমে গিয়ে দেখা গেছে, আউটসোর্সিং কর্মচারী ওয়ার্ড বয় আলমগীর হোসেন গাজীপুরের শ্রীপুরের সিএনজি চালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত রোগী সোহেল মিয়ার কেটে যাওয়া বাম হাতের আঙুলে সেলাই করছেন। সেলাই শেষে ড্রেসিং করে দেয় ওয়ার্ড বয়।এ সময় ওয়ার্ড বয় আলমগীর হোসেনকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে জানান, এরকম ছোটখাটো কাজ তারা অহরহই করে থাকে। আর ঈদের দিন রোগীর চাপ বেশি থাকায় সকাল থেকেই তারা ড্রেসিংরুমে এই কাজ করছে।
অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার সাদমান জানান, ঈদের দিন সকাল থেকেই ব্যাপক রোগীর চাপ ছিল। রোগীর চাপ সামলাতে কর্মচারীদের সহায়তা নেওয়া হয়ে থাকে। সবার সহযোগিতায় হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে জানান তিনি।
এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের অনেক ওয়ার্ডেই রোগীরা চিকিৎসকের দেখা পাননি জানান। অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগে মহিলা ইউনিটে ভর্তি হওয়া পড়ে গিয়ে হালুয়াঘাটের ডান পা ভেঙে আসা রোগী কৌশলা রাংসার (৭৫) মেয়ে প্রাপ্তি রাংসা জানান, হালুয়াঘাটের গ্রামের বাড়িতে বৃষ্টি হওয়ায় উঠানে পড়ে গিয়েছিল তার মা। পড়ে গিয়ে ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের দিকে ভেঙে গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। শুক্রবার সকালে একবার চিকিৎসক দেখে গেছে। এরপরে শুক্রবার রাতে ও শনিবার সারাদিন তারা চিকিৎসকের কোনও দেখা পাইনি। এখন ঈদের মধ্যে ডাক্তার আসবে কি না বলতে পারছেন না তিনি।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা রোগীর স্বজন কামরুল হাসান জানান, ঈদের ছুটি থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ছুটি নিয়ে পরিবারের কাছে চলে গেছেন। চিকিৎসক সংকট থাকায় শুক্রবারের পর থেকে রোগীর কাছে চিকিৎসক খুব বেশি আসেনি। তবে চিকিৎসকরা যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে সেটা দেখে স্টাফ নার্সরা ঠিকমতোই ওষুধপত্র দিয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালের অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার জাকির হোসেন জিকুর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌসের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের এই দূরবস্থার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে চায় ময়মনসিংহবাসী।