সময় ভালো যাচ্ছে না চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এক জোড়া সিংহী আর দুটি ভাল্লুকের। বড্ডো একাকীত্বে খাঁচায় দুর্বিষহ দিন পার করছে আরও দুটি মাদি সাম্বার হরিণ আর একটি গয়াল ষাঁড়। তাদের এই ভীষণ একাকীত্বের কারণ, তাদের কোনও সঙ্গী নেই।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব প্রাণি এরই মধ্যে তাদের পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গেছে। কিন্তু, তাদের কোনও সঙ্গীর ব্যবস্থা করতে পারেনি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এর ফলে তারা না পারছে নিজেদের শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে, না হচ্ছে তাদের বংশ বিস্তার।
প্রাণিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি সিংহ বা সিংহী খাঁচায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বাঁচে। এ চিড়িয়াখানায় থাকা ‘নোভা’ ও ‘বর্ষা’ নামের সিংহী দুটি ২০০৫ সালের জুনে জন্মগ্রহণ করে। তারা এখন তাদের ভরা যৌবনে উপনীত। তাদের মা লক্ষ্মী তাদের জন্মের সময়ই মারা যায়। আর বাবা ‘রাজ’ ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মারা যায়। এ দুটি সিংহ শাবককে এ চিড়িয়াখানায় বড় করা সম্ভব হলেও তাদের চাহিদার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, খাগড়াছড়ি ও গাজীপুর থেকে আনা দুটি ছেলে ভাল্লুকের বয়স বর্তমানে ১৩ ও ৬ বছর। প্রাণিবিদ ড. মো. ফরিদ আহসান জানান, একটি স্বাভাবিক এশিয়াটিক কালো ভাল্লুক গড়ে ২০ বছর বাঁচে। সে হিসেবে একটি ভাল্লুক এরই মধ্যে তার জীবনসীমার ৬০ ভাগ অতিক্রম করেছে। অথচ সে কোনও মাদি ভাল্লুকের সঙ্গ পায়নি এখনও।
অন্যদিকে দুটি মাদি সাম্বার হরিণও সঙ্গীবিহীন। তাদেরও গড় আয়ু ২০ বছর।
এছাড়া একটি বিশাল আকৃতির গয়াল প্রজাতির ষাঁড়েরও কোনও সঙ্গী নেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান বলেন, দীর্ঘ সময় একাকী থাকায় প্রাণীদের স্বাভাবিক স্বভাব বিলুপ্ত হয়ে যায়। তারা উগ্র আচরণ করে। অনেক সময় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির নিয়মিত বৈঠক হয় না। তাই আমরা এসব সমস্যা আলোচনা করতে পারি না।’
এদিকে চিড়িয়াখানায় নেই জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জিরাফ, হাতি, উট পাখি, গণ্ডার ও জলহস্তীর মতো প্রাণি। এতে অনেক দর্শনার্থীই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রওনাক জাহান বলেন, ‘বাঘ ছাড়া চিড়িয়াখানা কল্পনাই করা যায় না। আমার ছেলে বাঘ দেখতে না পেরে হতাশ হয়েছে। অন্যদিকে টিকিটের মূল্য ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ড. মো. মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী জানান, চিড়িয়াখানার শেষ বাঘিনী ‘পূর্ণিমা’ ২০১২ সালে অন্ত্রে ক্যান্সার হয়ে মারা যান। তার সঙ্গী চন্দ্রার ২০০৬ সালে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। আমরা সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকটি চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ককে চিঠি দিয়েছি বাঘ, সিংহ ও মেয়ে হরিণের জন্য।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে রংপুর চিড়িয়াখানাতেও কোনও সিংহী নেই। আমরা সহজেই একটি সিংহ এনে তাদের সঙ্গে সিংহীর পরিবর্তন করতে পারি।
তবে চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, একাকীত্ব দূর করতে প্রাণিদের সঙ্গীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমার ইতোমধ্যে সরকারি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সহায়তা করার জন্য বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছি। তবে বাঘ আনার ব্যাপারটি একটি বিশাল ব্যয়ের ব্যাপার। বড় প্রাণির জন্য ছয় একরের এই জায়গাটি খুব একটা বিশাল নয়।’
চট্টগ্রাম শহরের ফয়েজ লেক এলাকায় চিড়িয়াখানাটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৬৭টি প্রজাতির ৩৬০টি প্রাণি রয়েছে। এদের মধ্যে ৩৪ প্রজাতির পাখি, ৩৩ প্রজাতির সরীসৃপ এবং বাকিগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণি।
আরও পড়ুন: কম দামে ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন পঞ্চগড়ের কৃষকেরা
/এনএস/টিএন/