X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জমি ও পানি ব্যবস্থাপনা সংকট: হুমকির মুখে চিংড়ি রফতানি!

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
১০ জুন ২০১৬, ০৭:০৩আপডেট : ১০ জুন ২০১৬, ১৫:১৫

 

খুলনা অঞ্চলের ঘেরগুলোতে চিংড়ি (বাগদা) মাছের মড়ক থামছে না। তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে এ অবস্থা চলছে। পাশাপাশি রয়েছে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। যা চিংড়ির উৎপাদন ও চাহিদা পূরণে  প্রভাব ফেলছে। রফতানিকারকরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও উৎপাদন নিয়ে সংকটে রয়েছেন। মড়কের ফলে মৌসুমের শুরুতেই তৃণমূলের মৎস্য চাষিরাও উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্যাকেজিং শর্তের চাপ সামলে নিয়ে হিমায়িত মৎস্য রফতানি শুরু হলেও চাষ প্রক্রিয়া, পানি ও জমি ব্যবস্থাপনা সংকটের কারণে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) এর পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, এনবিআরের শর্ত সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না হলেও বর্তমানে রফতানি কার্যক্রম চলছে। সাপ্লাইয়ে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বিশ্ব বাজারের মূল্য সন্তোষজনক রয়েছে। তৃণমূলের কিছু এলাকায় চিংড়িতে মড়ক থাকার কারণে উৎপাদনে সমস্যা থাকছে। তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারের সমস্যা সমাধান হয়েছে। তবে এখন জমি ও পানি ব্যবস্থাপনার ওপর ফোকাস করা হচ্ছে।

চিংড়ি

হুমায়ুন কবীর  আরও বলেন, চিংড়ি চাষের ঘেরে কমপক্ষে ৫ ফুট গভীরতা প্রয়োজন। তা না হলে তাপমাত্রা চিংড়ির জন্য সহনশীল থাকে না। পানি পরিবর্তন করার ধারাবাহিকতা সঠিক করার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা গতিশীল করা প্রয়োজন। শুস্ক মৌসুমে জমিতে চুনসহ জৈব সার সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ এবং জমির ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা সঠিকভাবে করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনে দরিদ্র কৃষকদের আর্থিক ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন হোসেন জানিয়েছেন, হঠাৎ করে তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে ঘেরের মাটি ও পানির ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে লবণাক্ততাও বেড়েছে। এতে চিংড়ির স্বাভাবিক পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে বেশি মাত্রায় চিংড়ি মারা যায়। মড়ক ঠেকাতে এ মুহূর্তে নিয়মিত ঘেরের পানি পরিবর্তন ও ঘেরে গভীরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি মারা যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এখনও যে সময় আছে বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চিংড়ি চাষিরা এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

কয়রা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ২শ’টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। এ ঘেরগুলোতে এবার চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩৫০ কেজি। এ জন্য চিংড়ি চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও করা হয়।

কয়রা উপজেলার হায়াতখালি এলাকার চিংড়ি চাষি আবু সাঈদ বিশ্বাস জানান, তার ৭০ বিঘা ও ২০ বিঘার দু’টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। দু’টি ঘেরে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। মৌসুমের শুরুতে ঘের দু’টিতে দেড় লাখ টাকার চিংড়ি ধরতে পেরেছেন। এরপর থেকেই পানির নিচে মরা চিংড়ি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে এভাবে চিংড়ি মরলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৭ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৯শ’ ৪০টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। এ ঘেরগুলোতে এবার চিংড়ি উৎপাদনের জন্য ৪ হাজার চাষী তৎপরতা চালাচ্ছেন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য চিংড়ি চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

খুলনার একটি চিংড়ি ঘের

পাইকগাছার প্রতাপনগরের চাষী মনোতোষ বড়–য়া জানান, নিয়মিত পানি সরবরাহ না করায় ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে বেশি। আর নদী থেকে পানি ওঠানামা করানোয় ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে কম। পাইকগাছার বেশিরভাগ ঘেরেই চিংড়ি কমবেশি মারা যেতে দেখা গেছে। মৎস্য অফিসের পরামর্শের পাশাপাশি নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েও চিংড়ির মড়ক বন্ধ করা যাচ্ছেনা।

পাইকগাছা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, বর্তমানে কয়েক দফা বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা সহনীয় রয়েছে। তারপরও কিছু কিছু ঘেরের চিংড়িতে মড়ক একেবারে যায়নি। যথাযথভাবে নার্সিং করতে না পারায় এখনও মড়ক আছে। তিনি বলেন, চিংড়ি চাষের জন্য কমপক্ষে ৫ ফুট গভীরতা প্রয়োজন। তীব্র গরমের সময় ৩ ফুট পানির নিচে পর্যন্ত সূর্যের তাপ ছড়াতে সক্ষম। এ অঞ্চলের ঘেরগুলোতে ৩ ফুট গভীরতা থাকে। ফলে তাপমাত্রা হেরফের হলেই চিংড়িতে মড়ক দেখা যায়। আর পোনা আহরণ ও প্রক্রিয়াগত কারণে ভাইরাস সমস্যা থাকে। তবে তা প্রকট নয়।

বিএফএফইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে হিমায়িত চিংড়ির মারাত্মক দরপতন, ডলারের বিপরীতে রুবল ও ইউরোর দরপতন এবং কমদামী চিংড়ির ব্যাপক বাজারজাতকরণের ফলে চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে সংকটে পড়ে। এছাড়া চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায়, প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো নামমাত্র উৎপাদন করায় ঋণে দায়গ্রস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে চিংড়ি রফতানিকারক অর্ধেক প্রতিষ্ঠান নানাবিধ কারণে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে অচিরেই এ শিল্পখাতে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে বিএফএফইএ।

জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের ৬০টি হিমায়িত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানার মধ্যে ৪০ প্রতিষ্ঠান রফতানিতে সচল রয়েছে। জাতীয় হিমায়িত চিংড়ির মধ্যে ৭০ শতাংশ খুলনা অঞ্চল থেকেই রফতানি হয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি হয়েছিল ৫০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, এনবিআর-এর আওতাধীন খুলনা শুল্ক বিভাগ হিমায়িত চিংড়ি রফতানিতে ব্যবহৃত প্যাকেজিং সামগ্রী (কার্টন ও একসেসরিজ) সংগ্রহে স্থানীয় মুদ্রা (টাকার) পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলারে) আইএলসি (ইনল্যান্ড লেটার অব ক্রেডিট) খোলা এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি-র শর্তারোপ করার ফলে ২০১৫ সালের অক্টোবরের শেষদিকে খুলনা অঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় চিংড়ি রফতানি খাতে  অন্তত একশ’ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন: 

তিন কোটিরও বেশি টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড!
শ্যামল কান্তি ভক্তের ঘরে ফেরা

‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে র‌্যাব-পুলিশের প্রতিরোধ?

এইচএইচ/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় জাদুঘরে সপ্তাহে একদিন বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার চান দর্শনার্থীরা
জাতীয় জাদুঘরে সপ্তাহে একদিন বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার চান দর্শনার্থীরা
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
দুষ্প্রাপ্য প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
দুষ্প্রাপ্য প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
রাজধানীতে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রাজধানীতে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
ত্বক তারুণ্যদীপ্ত দেখানোর ৮ টিপস 
ত্বক তারুণ্যদীপ্ত দেখানোর ৮ টিপস 
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
কাশ্মির সীমান্তের দুই দিকে বিপরীত দুই দৃশ্য
কাশ্মির সীমান্তের দুই দিকে বিপরীত দুই দৃশ্য
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন