জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা। ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য যেখানে ২৯ ডাক্তার থাকার কথা সেখানে রয়েছে মাত্র ১৩ জন। ফলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। এরপর প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে ৫০ শয্যা চালাতে গিয়ে উপজেলার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ডাক্তারদের নিয়ে আসা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
৩১ শয্যার রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে ৫০ শয্যার রোগীদের মধ্যে। নেই কোনও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দুই যুগ আগের পুরাতন এক্সরে মেশিনটিও। ব্লাড ব্যাংক না থাকার অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে।
টেকনিশিয়ানের অভাবে পড়ে আছে অত্যাধুনিক ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনগুলোও। সার্জারির ডাক্তার না থাকায় শুধু প্রসূতিদের ছাড়া অন্য কোনও অপারেশন করা যাচ্ছে না এখানে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্তকর্তা ডা. জয়নাল আবেদিন টিটো বলেন, ‘৩১ শয্যার জনবলে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল। তারপরও যে টুকু আছে তা নিয়েই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে জরুরি ভিত্তিতে ৫০ শয্যার জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে রোগীদের আরও উন্নত সেবা দেওয়া যেত।’
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এখনও এটিকে অনুমোদন দেয়নি। তাই ৩১ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
রোগীদের খাবার প্রসঙ্গে ডা. জয়নাল বলেন, বরাদ্দ না থাকায় ৩১ জনের খাবার দিয়ে কোনওভাবে ম্যানেজ করে ৫৫-৬০ জনকে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতাল ক্লিনিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ছাড়া বাকি সব সবার বয়স ৫৫ বছর হয়ে গেছে। তাই এদেরকে দিয়ে সব কাজ করানো সম্ভব হয় না। এখানে ক্লিনিং ও নার্সিংয়ের লোক খুব প্রয়োজন।
ড. জয়নাল বলেন, ‘যেহেতু শ্রীমঙ্গল একটি চা বাগান পরিবেষ্ঠিত এলাকা সে হিসেবে বাগান এলাকাতে একটু বেশি মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি আছে। তাই আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তাদেরকে সচেতন করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। এতো কিছুর পরও আমরা গত ছয় মাসে ৭৬ হাজার রোগীর চিকিৎসা দিয়েছি। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ জন করে।’
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে বহন করতে আরও অ্যাম্বুলেন্স দরকার। এছাড়া রক্ত নেওয়ার জন্যও ভালো টেকনিশিয়ানের খুব প্রয়োজন।
আল্ট্রাসনোলজিস্ট ডাক্তার, ইসিজি মেশিন চালানোর টেকনিশিয়ান এবং টেকনিশিয়ান থাকলে এক্সরে মেশিন মেরামত করে এসব সেবা দেওয়া যেত। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন এখানে খুব দরকার। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে কিন্তু অপারেশন করতে হলে ৫ জন লোকের প্রয়োজন। লোকবলের অভাবে আমরা সে কাজটিও করতে পারছি না।
আরও পড়ুন: ব্যস্ততা বেড়েছে কুষ্টিয়ার বুটিকস কারিগরদের
/এআর/এসটি/