X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ডে থাকা ফাইজুল্লাহ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

মাদারীপুর প্রতিনিধি
১৮ জুন ২০১৬, ০৯:৪৩আপডেট : ১৮ জুন ২০১৬, ২১:৩৮

গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম

মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। শনিবার (১৮ জুন) ভোরে মাদারীপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ারচর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার তাকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পরদিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় ফাহিম।

মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার সারোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ফাইজুল্লাহ ফাহিম নিজেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর ধ্যান-ধারণায় উদ্বুদ্ধ হিজবুত তাহরিরের সদস্য বলে দাবি করেছিল।

সদর থানার এসআই বারেক করিম হাওলাদার জানান, পুলিশ ফাইজুল্লাহকে নিয়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গেলে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এসময় পুলিশের এক সদস্যও আহত হন।

মিয়ারচর এলাকার স্থানীয়রা জানান, একটি ধান ও পাট ক্ষেতের মাঝখানে ফাইজুল্লাহর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর আগে লাশটি হাসপাতালের সামনে রাখা হয়। এসময় ফাইজুল্লাহর বুকে গুলির চিহ্ন দেখা যায়। তার পরনে প্যান্ট ও একটি সাদা রংয়ের গেঞ্জি রয়েছে। হাত সামনে এনে হ্যান্ডকাফে আটকানো।

মাদারীপুরে শিক্ষককে কুপিয়ে জখম

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বরিশালে হাসপাতালে উপস্থিত শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী, তার স্ত্রী ও তাদের পরিবারের লোকজনকে মামলা করার অনুরোধ করা হলে তারা এ ঘটনায় আতঙ্কিত ও বিচলিত জানিয়ে আর মামলা না করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইয়ুব আলী হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। এতে ফাইজুল্লাহসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।

আটক ফাইজুল্লাহ ফাহিমের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়েরের সময় তার পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে- পিতা: গোলাম ফারুক, সাং দারিয়াপুর, থানা ও জেলা চাপাইনবাবগঞ্জ এবং বর্তমান ঠিকানা: বাড়ি নং ১২৯ (দ্বিতীয় তলা), লেন-৫, টিআইসি কলোনী, ফায়েদাবাদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

মামলায় আরও যে ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান তাসকিন ওরফে আবুল হোসেন ওরফে সালিম (১৯), শাহরিয়ার হাসান ওরফে পলাশ (২২), জাহিন (২৩), রায়হান (২৪), মেজবা (২৪)। শুধু জনগণের হাতে আটক ফাইজুল্লাহ ফাহিম ছাড়া বাকি সবার নাম ও বাবার নাম এবং ঠিকানা অজ্ঞাত। তারা সবাই মাদারীপুরে শিক্ষক হামলার ঘটনায় অংশ নিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে ফাইজুল্লাহ ফাহিম। মামলায় আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছে সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তা এসআই বারেক করিম হাওলাদারকে।

মামলার বাদী সদর থানার এসআই আইয়ুব আলী বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও আশ-পাশ থেকে জব্দকৃত রক্তমাখা পোশাক, হামলায় ব্যবহৃত ভারী ও ধারালো চাপাতি ও একটি দস্তানা এবং পরবর্তীতে অভিযানে ফাইজুল্লাহার ব্যবহৃত ল্যাপটপসহ জব্দ করা অন্যান্য আলামত থানায় রাখা হয়েছে।

ফাইজুল্লাহ ফাহিম

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, জনগণের হাতে আটক ফাইজুল্লাহ ফাহিম নিজে এবং সালমান তাসকিন ওরফে আবু হোসেন ওরফে সালিম ও শাহরিয়ার হাসান ওরফে পলাশ ওই শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। তাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে মেজবা, জাহিন ও রায়হানসহ ৩ জনের আরেকটি দল। তারা ঘটনাস্থলের বাইরে পাহারায় ছিল।

শুক্রবার বিকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ জানান, মাদারীপুরে এই প্রথম জঙ্গি হামলার সংশ্লিষ্ট কাউকে হাতে-নাতে আটকের ঘটনার গভীরতা অনেক বেশি। পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে খুবই ধূর্ততার সঙ্গে ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশকে ভুগিয়েছে। যেসব তথ্য দিয়েছে সেই অনুযায়ী অভিযানে গিয়ে কোনও কিছুই মেলেনি। সে নিজে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ধ্যান-ধারণার কথা স্বীকার করলেও তার লিংকের কোনও তথ্যই প্রকাশ করেনি।

উল্লেখ্য, মাদারীপুরের সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে বুধবার (১৫ জুন) বিকেলে নিজ বাসার দরজায় কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা। পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন তিনজনকে ধাওয়া করে  এবং ফাইজুল্লাহকে ধরে ফেলে। ওই শিক্ষককে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সফল অস্ত্রোপচার শেষে তার অবস্থা এখন আশঙ্কামুক্ত।

ফাইজুল্লাহর ছবি দেখে তাকে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন আহত শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুর সদর থানার এসআই আইয়ুব আলী ঘটনার তদন্তে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে রিপন চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি বেশ সুস্থ ছিলেন। হামলার পর মাদারীপুরে জনগণের হাতে আটক ফাইজুল্লাহ ফাহিমের ছবি দেখালে শিক্ষক রিপন তাকে চিনতে পারেন। ফাইজুল্লাহ ফাহিম তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপ মেরেছে বলে শনাক্ত করেন তিনি। মামলার এজাহারে তথ্যটি উল্লেখ করা হয়েছে। 

/এফএস /এএইচ / 

আরও খবর পড়ুন- 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক