X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১
তালিকাভুক্তদের বেশিরভাগই বাড়িতে

র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকায় ঝিনাইদহের প্রতিবন্ধী, প্রবাসী ও নিহতদের নাম

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
২২ জুলাই ২০১৬, ০৩:৫৮আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৬, ০৪:০৯
image

ঝিনাইদহ র‌্যাব নিখোঁজ ২৬২ জনের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে ঝিনাইদহের ২৯ জনের নাম রয়েছে। তবে সেই নাম নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। র‌্যাবের তালিকায় নিহত, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, প্রবাসী ও বাড়ি ফিরে আসা ব্যক্তিদের নাম রয়েছে।
বৃহস্পতিবার র‌্যাবের তালিকা নিয়ে জেলাব্যাপী অনুসন্ধানের পর এসব তথ্য মিলেছে। র‌্যাব সদর দফতর থেকে প্রকাশিত তালিকায় দুইজন নিখোঁজ থাকার প্রমাণ মিলেছে।
এরা হলেন ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা ও সদরের হলিধানী গ্রামের রাশেদুজ্জামান রোজ। তবে পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় সোহেল রানা থাকলেও রোজ নেই।
জেলাব্যাপী নিখোঁজদের তালিকা নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন সময় জেলায় ২৪ জন নিখোঁজের খবর তাদের কাছে ছিল। কিন্তু নিখোঁজ থাকা সবাই বাড়ি ফিরে এসেছে। কেউ আবার প্রবাসী।
সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে জেলায় চার জনের নিখোঁজ থাকার কথা বলা হয়। এরা হলেন মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহল রানা, শৈলকুপার উজ্জল, মজেদুল ও তোতা মিয়া। তবে সোহেল রানা ছাড়া অন্য তিনজনের সর্বশেষ তথ্য পুলিশের কাছে নেই।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাবের তালিকায় ঝিনাইদহ পৌর এলাকার চরখাজুরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দুলাল (৩০) ও একই গ্রামের গোলাম আজম পলাশ (৩২) এর নাম রয়েছে। অথচ ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এই দুই যুবকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। তাদের পরিবারের দাবি, ডিবি পুলিশ পরিচেয়ে এই দুই যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করা হয়।

এদিকে র‌্যাবের তালিকায় বাড়িতেই আছেন, বিদেশে চাকরি করছেন এমন প্রবাসী এবং প্রতিবন্ধীদের নামও পাওয়া গেছে।

র‌্যাবের তালিকায় ৬২ নং ক্রমিকে সোহেল ও ৬৩ নং ক্রমিকে মামুন রায়হান নামে দুই প্রতিবন্ধির নাম রয়েছে।

মামুনের বোন জেসমিন ও সোহেলের বোন শারমিন জানান, প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে প্রায় তারা হারিয়ে যেত। এ জন্য থানায় জিডি করা হয়েছিল।

র‌্যাবের তালিকায় থাকা কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের মাজেদুল হক (৩৫), দাদপুর গ্রামের আবু সাইদ ও বলরামপুর গ্রামের মো. হাসান আলী (৩০) নিখোঁজ হয়নি। তালিকা প্রকাশের আগ থেকে তারা বাড়িতেই আছেন।

তিন জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিমান করে তারা বাড়ি থেকে চলে গেলে থানায় জিডি করা হয়। হয়তো সেই জিডির ভিত্তেতে এই তালিকা হয়েছে।

২০৬ নাম্বারে মহেশপুরের গোয়ালহুদা গ্রামের বাপ্পি ও ২৩২ নাম্বারে একই গ্রামের ওয়াফিলকেও বাড়িতে পাওয়া গেছে।

ওয়াফিলের বাবা ইয়াকুব হোসেন জানান, ১১ বছর বয়সে তার ছেলে ও বাপ্পি নামে তার এক বন্ধু নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে জানতে পারি ইংরেজি পরীক্ষায় খারাপ হওয়ার কারণে বাপ্পি ও ওয়াফিল ছয় দিন পালিয়ে ছিল। এ ঘটনায় আমি থানায় জিডি করি। তিন বছর পর র‌্যাবের করা তালিকা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন বলে জানান।

ইয়াকুব আরও জানান, দুই থেকে তিন দিন আগে মহেশপুর থানার ওসি তাকে ডেকেছিলেন। আমি সেখানে সব বলে এসেছিলাম। এখন র‌্যাব অফিস থেকে ফোন করে দেখা করার কথা বলা হচ্ছে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাচারিতোলা গ্রামের ছব্দুল হোসেন জানান, ‘আমার মেয়ের জামাই মতিয়ার রহমান (৩০) মেয়ের সঙ্গে রাগ করে নিজ বাড়ি চলে যায়। আমি বিপদের কথা ভেবে থানায় জিডি করি। র‌্যাব আমার বাড়িতে তদন্ত করতে আসে। আমি বলি পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমি জিডি করেছিলাম। র‌্যাব চলে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় দেখি তালিকায় তার নাম।

একই উপজেলার আদর্শ আন্দুলিয়া গ্রামের আকাশ জানান, তার ভাই  র‌্যাবের তালিকায় থাকা ৮১ নাম্বারের মো. শফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ। সে এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। পরে সে বাড়ি ফিরে আসে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর আইয়ুব হোসেন জানান, তার এলাকার কাশিপুর গ্রামের মো. শামীম আলী (২৬) ও মো. মোজাম্মেল মোল্লার (২৮) খোঁজ করে র‌্যাব। কিন্ত তারা কেউ নিখোঁজ না। শামিম বাড়িতে আছে আর মোজাম্মেল প্রবাসী। আগে একবার মোজাম্মেল ঝিনাইদহ শহরের হামদহ থেকে অপহরণ হয়েছিল। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমরা জিডি করি।

র‌্যাবের তালিকায় শৈলকুপার নিখোঁজ থাকা আট জনের মধ্যে সবাই বাড়িতে আছেন। কেউ আছেন বিদেশে।

শৈলকপুার হুদা মাইলমারী গ্রামের আমিজ উদ্দীন জানান, তার ছেলে মাসুমকে সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি জিডি করেন। পরে আমার ছেলে ফিরে আসে।

একই উপজেলার চরআউশিয়া গ্রামের নাইমের নাম র‌্যাবের তালিকায় ৮৪ নম্বরে আছে। কিন্তু তার পরিবারের দাবি নাইম বিদেশে চাকরি করছেন।

শৈলকুপার সাতগাছি গ্রামের মো. মজিবর খা (২৮) বোয়ালিয়ার উজ্জল, ওয়াসিম আকরাম (২৫), উমেদপুরের মো. রবিউল ইসলাম (২৫), বাজারপাড়ার মো. রফিকুল ইসলাম (২২) ও কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. তোতা (২৫) মিয়া নিখোঁজ নয় বলে তাদের পরিবার জানিয়েছে।

গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, র‌্যাবের তালিকায় নিখোঁজ থাকা কালুহাটী গ্রামের মো. আশিকুর রহমান রিপন (২৪) ও  আক্তারুজ্জামান বাড়িতেই আছেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে এরা নিখোঁজ থাকার কারণে জিডি করা হয়েছিল।

এদিকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১০ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। দীর্ঘদিনেও তাদের কোনও সন্ধান মেলেনি। এই তালিকায় তাদের নাম আসেনি।

/এনএস/টিএন/

আপ - /এসএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
বজ্রাঘাতে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় কারিগরি ত্রুটি, দীর্ঘ যানজট
বজ্রাঘাতে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় কারিগরি ত্রুটি, দীর্ঘ যানজট
স্যালাইনের দাম না বাড়াতে সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্যালাইনের দাম না বাড়াতে সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র