X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অর্থাভাবে সংস্কার হয় না মাহবুবের কবর

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
২১ আগস্ট ২০১৬, ০৪:২৮আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৬, ০৫:৩০

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ীয়া গ্রামের মাহবুবুর রশিদ মাসুদ। গ্রেনেডের আঘাতে মাহবুবের আত্মাহুতির কারণেই সেদিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাহবুবের সেই আত্মত্যাগের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেলেও তার অনুপস্থিতি আজ কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়েছে তার পরিবারকে। মাহবুবের মৃত্যু বদলে দিয়েছে পুরো পরিবারের জীবনচিত্র।

গ্রেনেড হামলার এক যুগ পেরিয়েছে। কিন্তু মাহবুবের পরিবারের খোঁজ নেয় না কেউ। কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। মাহবুবের বৃদ্ধ পিতা হারুন অর রশিদ আক্ষেপ করে বলেন, আগস্ট মাস আসলেই সবাই মাহবুবের কথা মনে করেন। তার আগে তো কেউই মাহবুবের পরিবারের খোঁজ নিতে আসেন না। আমরা কি করছি। কি খাচ্ছি। কিভাবে বেঁচে আছি। তার খোঁজ রাখে না কেউ। সাংবাদিকরাও এই দিন হলেই আমাদের বাড়িতে আসে। এই টিভি, ওই টিভি, পত্রিকা আরো কতো কিছু! কিছুই তো হয় না। এসব করে কি লাভ ? আর এসব বলেই বা কি হবে আমাদের? পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?

মাহাবুবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মাহবুব ছিলো খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কোনওদিন কারও সঙ্গে তার কোনও ধরনের কথা-কাটাকাটিও হয়নি। এলাকার সকলের প্রিয় পাত্র ছিলো সে। অভাব আর অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলো, অনেক কষ্ট করেছে জীবনে। দেশের জন্য ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়েছে। মাহবুব আমার সন্তান ছিলো এ কথা ভাবতে আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়। আমি এমন এক সন্তানের পিতা যে তার নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে।

অর্থাভাবে সংস্কার হয় না মাহবুবের কবর

মাহবুবের স্ত্রী ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বড় ছেলে আশিক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং আর ছোট ছেলে রবিন ডাক্তারি পড়ছেন। হারুন অর রশিদ বলেন, আমার চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ছিলো। মাহবুব তো চলেই গেছে আমাদের ছেড়ে। এখন রয়েছে তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। ছোট মেয়েটার বিয়ে দেওয়াটাই এখন আমার চিন্তার কারণ। আর যে মাহবুব প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে, তার কবরটা অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এটা সংস্কারের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার মাহবুবের কবরটা যেন সংস্কার করে দেন। আর ছোট মেয়েটার একটা চাকরি বা বিয়ের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সরকারের দেওয়া ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের মাসিক লাভের টাকা আর প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে পাই। বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টাকায় আমাদের সংসার চলে। মাহবুবের মা হাসিনা খাতুন বলেন, সেদিনের সেই হামলার কিছুদিন আগে মাহবুবকে একটি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকদিন ব্যবহার করে স্মৃতিস্বরূপ আমার কাছে দিয়ে যায় মাহবুব। ঘড়িটার দিকে তাকালেই মনে পড়ে আমার মাহবুবের কথা। তিনি আরো বলেন, ওই যে দেখছেন, টিউবওয়েল! শেষবার বাড়িতে এসে এটা দিয়েছিলো মাহবুব। বলেছিলো, এবার প্লাস্টার করা হলো না। ঘুরে এসে প্লাস্টার করে দেবো। কিন্তু পরে আর ফিরে এলো না সে। আমি মাহবুবের মা। এ কথা ভেবেই আমি গর্ববোধ করি। মাহবুবের বোন আবিদা সুলতানা বলেন, আমার ভাই শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি মাহবুবের বোন। এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদৌস মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অর্থে ভালোই আছে মাহবুবের পরিবার। তবে তার কবরটি সংরক্ষণের প্রয়োজন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিস) সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহবুবের এক ভাইকে খোকসা উপজেলা পরিষদে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যাতে করে তাদের সংসারটা ঠিকমতো চালাতে পারে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দেহরক্ষী হিসেবে মাহবুব যোগদান করেন ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে। এর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন ল্যান্স করপোরাল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মাহবুবের ছুটি ছিল। তারপরও জনসভায় যোগ দিতে ঢাকার বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে হাজির হন সেখানে। বিকেল ৫টার কিছু সময় পর শেখ হাসিনার ভাষণ শুরু হয়। ঠিক এমন সময় জনসভার ওপর পড়তে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। গ্রেনেড হামলায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বুলেটপ্রুফ গাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। মাহবুব তাকে গাড়িতে প্রবেশ করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু শেখ হাসিনা মাহবুবকে চিৎকার করে বলেন, না আমি যাবো না, ওরা মারে আমাকে মারুক। নেত্রীর সে কথায় কান না দিয়ে মাহবুব বুক দিয়ে আগলে গাড়ির মধ্যে তাকে ঠেলে দেন। আর ঠিক এ সময় ঘাতকের একটি বুলেট তার মাথার পেছন দিয়ে প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আরো কয়েকটি গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়। সেখানেই পড়ে যান দেহরক্ষী মাহবুব। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ২১ আগস্ট রাতেই মাহবুব মারা যান।

/এমপি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জার্মানির ইউরোর দলে নেই হামেলস, গোরেৎজকা
জার্মানির ইউরোর দলে নেই হামেলস, গোরেৎজকা
আরও ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
আরও ৫৫ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে নিয়োগের চাহিদা পাঠালে ব্যবস্থা
কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলে নিয়োগের চাহিদা পাঠালে ব্যবস্থা
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা