X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিরনগরে আ. লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১২:০২আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:৪০

নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হামলার আগে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা’র প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশগুলোতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীদের অনেকে। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সদর আসনের এমপি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী জানিয়েছেন, উসকানি দেওয়ার সঙ্গে দলের লোকজন জড়িত থাকলে তারা রেহাই পাবে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. সুরুজ আলী তার সমর্থকদের নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন। তার সঙ্গের কিছু লোকের হাতে লাঠিসোটা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও তৌহিদি জনতার পৃথক দুটি সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান। তাদের মধ্যে সুরুজ আলী বক্তব্য দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও উসকানিমূলক কিছু বলেননি বলে দাবি করেছেন। নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলা

 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এলাকার একাধিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য অভিযোগ করেন, ‘যাদেরকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছিলাম হামলার দিন তারা যেন কেমন অচেনা হয়ে গেলেন। আবার হামলার পরদিন যখন বিভিন্ন স্থান থেকে সরকারি-বেসরকারি এবং রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসলেন, তখন সবার সামনে তোষামোদি করা হচ্ছে।’ নেতাদের এই ভূমিকা ভবিষতে ভোট চাওয়ার সময় মনে রাখবেন বলেও জানান তারা। তাদের দাবি,  জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণের কারণ অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় আনতে হবে।  

সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ আলী। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে রসরাজের (যার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিতর্কিত ছবি আপলোডের অভিযোগ রয়েছে) ফাঁসি দাবি করেছি।’

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের উপজেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক মুফতি ইসহাক আল হোসাইনও স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ আলী তাদের সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তিনি কোনও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি ইসহাক আল হোসাইন বলেন, ‘সম্ভবত তার (সুরুজ আলী) বক্তব্য রেকর্ড আছে। সেটা না শুনে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের সমাবেশ থেকে কেউ গিয়ে হামলা চালায়নি। ইসলাম সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। অন্য ধর্মের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামে স্পষ্ট করে বলা আছে।’

এ ব্যাপারে নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এটি এম মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই দিন সমাবেশে অংশ নিলেও আমি প্রতিবাদকারীদের থামানোর চেষ্টা করেছি। উসকানিমূলক কিছু বলিনি।’ নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলা

বুধবার দুপুরে হরিপুর গ্রাম পরিদর্শনকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বলেন, ‘তদন্তে কারও নাম বের হয়ে আসলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সে দলেরই হোক বা বাইরের হোক।’ এ সময় তিনি ব্যর্থতার জন্যে নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানান। 

আ.লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘উসকানি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, ঘটনার উৎপত্তিস্থল হরিপুর। যে রসরাজ দাসের ফেসবুক থেকে কাবা শরিফ অবমাননার কথা বলা হচ্ছে, সে পেশায় একজন জেলে এবং হরিপুর মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ওই সংগঠনের সভাপতি হলেন ১৯৭১ সালের রাজাকার তাইজুদ্দিন এর ছেলে ফারুক মিয়া। ফারুক আবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফেসবুকে ঘটনার পর রসরাজকে ফারুক বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।’

এ ঘটনার পেছনে দূরভিসন্ধি রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উসকানিদাতা চিহ্নিত করতে হলে আগে ফারুককে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে ঘটনার প্রকৃত উসকানিদাতারা বের হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এভাবে একের পর এক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। হামলাকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’। তদন্ত কাজে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

ঘটনার তিন দিন পর মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক নাসিরনগরে আসেন। তবে তিনি বুধবার সারাদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি। স্থানীয় ডাক বাংলোয় অবস্থান করেন।  এ নিয়েও এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলা

এদিকে মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে মঙ্গলবার সকাল থেকে। প্রাথমিকভাবে ঘটনার নেপথ্যে কারা, কী কারণে এমন হলো এ বিষয়ে তারা খোঁজ নিতে শুরু করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং পুলিশের তদন্ত টিমের প্রধান মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সময় মতো সব কিছু জনানো হবে।’

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলাকার পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। তবে আক্রান্তদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক এখনও রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মোট ১৪টি মন্দিরে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১টি ব্যক্তিগত মন্দিরকে পাঁচ হাজার টাকা করে ও নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বজনীন তিনটি মন্দিরকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।  এছাড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ১০টি মন্দিরকে ১০হাজার টাকা এবং ২৯টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রসরাজ দাস নামক এক যুবকের  ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় গত রবিবার হামলা চালিয়ে মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এর আগে শনিবার উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

আরও পড়ুন- 


জেলহত্যা মামলা: অনেক আসামিই বিচারের মুখোমুখি হয়নি

/এএ/এফএস/

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি