শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় অবশেষে ক্যাম্পাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে শাবি প্রশাসন। তবে অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাস খোলা রাখতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক নেমে অবরোধ করে। এসময় সড়কের দুপাশে কয়েক’শ যানবহন আটকে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এদিকে, বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অনির্দিষ্টকাল ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ১১টার দিকে জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে আগামী ৬ জানুযারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম এবং অধ্যাপক কবির হোসেন।
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনার ঘটনা তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক কবির হোসেন।
পরিবহন পরিচালক সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলমকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট, অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য, দ্বিতীয় ছাত্র হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এস এম হাসান জাকিরুল ইসলাম, শাহপরাণ হলের প্রভোস্ট শাহেদুল হোসান এবং সহকারী প্রক্টর আলমগীর কবির।
অধ্যাপক কবীর হোসেন আরও জানান, আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল ক্লাস-পরীক্ষা এবং ছাত্রদের আবাসিক হল বন্ধ থাকবে। তবে প্রশাসনিক ও ভর্তি কার্যক্রম যথারীতি চলবে।
অন্যদিকে, শাবিতে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের ঘটনায় শাবি প্রশাসনের নীরব ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। আর এ আন্দোলনকে থামাতে প্রশাসন এমন পরিস্থিতির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় শাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের অনুসারি সক্রিয় কর্মী আল আমিনকে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় আটক করা হয়। তবে প্রশাসন থেকে কোনও মামলা করা হয়নি বলে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে ৫ডিসেম্বর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মূল হোতাদের ধরার দাবিতে আন্দোলনে নামে। এরপর থেকেই আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী সারোয়ার তুষার জানান, আন্দোলনের মোড় ঘোরাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হল ও ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে এবং উপাচার্যকে আটকিয়ে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান সমর্থিত গ্রুপকে সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ, অঞ্জন রায়, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ সমর্থিত গ্রুপের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বর এলাকা থেকে ধাওয়া দিয়ে পরে হল দখলে নেয় তারা। পরবর্তীতে শাবি প্রশাসনের লিখিত চিঠির অনুরোধে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত হলে পুলিশ রেড দেয়। এসময় ইমরান খানের সমর্থিত কর্মীরা প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়াই হলে প্রবেশ করে। এসময় অন্য গ্রুপের নেতা-কর্মীরা হলে অবস্থান করছিল। এ ঘটনার পরেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে সকালেই হল ছাড়ার নির্দেশ আসে। তবে অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় অসুবিধায় পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
/এআর/