জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কলা ও মানবিক অনুষদের (সি ইউনিট) মেধা তালিকায় ৭১তম হয়েছিলেন জেএম আরাফাত ইসলাম। প্রকাশিত ফলে অনুষদের ছয়টি বিভাগে তাকে ভর্তির যোগ্য দেখানো হয়। কিন্তু শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে বাংলা বিভাগ তার অপারগতা প্রকাশ করে। জাবিতে ভর্তির আশায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হননি তিনি। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিনি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন আরাফাত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার আবেদনকারীদের শিক্ষাবোর্ড, ইংরেজি মাধ্যম ও বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়- এই তিন ক্যাটাগরিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্রেণিকরণ করা হয়। শিক্ষার পদ্ধতিগত ভিন্নতা থাকায় একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে এই তিন ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের ফল তুলনামূলক সমতাকরণ করা হয়। কিন্তু এবছর ভুলক্রমে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ফল সমতাকরণ করা হয়নি। আরাফাতকে মূল্যায়ন করা হয়েছে শিক্ষা বোর্ড ক্যাটাগরিতে। এ বছর বাংলা বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলায় ‘এ’ গ্রেড। কিন্তু আরাফাতের ‘এ মাইনাস’ গ্রেড থাকলেও তাকে যোগ্য দেখানো হয় সমতাকরণ না করার কারণে। সমতাকরণ করা হলে আরাফাত সয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যেতেন।
একাধিক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটি তাদের সভায় ভুলবশত উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল সমতাকরণের সিদ্ধান্ত নেয়নি।
২০ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগে ভর্তি হতে গেলে বিভাগীয় ভর্তি কমিটির সদস্য অনিরুদ্ধ কাহালির নজরে আসে বিষয়টি। শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাকে ভর্তি না করানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিভাগ।
এরপর ২১ ডিসেম্বর ভর্তির সুযোগ চেয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করেন আরাফাত। কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় বাংলা বিভাগ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় গত ১১ জানুয়ারি আইনজীবী চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আরাফাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের সভাপতিকে সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম আবু দায়েন বলেন, ‘শর্ত পূরণ না করলে কোনও শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলে ওই শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাই তাকে ভর্তির ব্যাপারে আমরা বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভায়ও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল। বাংলা বিভাগ তাকে ভর্তি করবে না বলে জানিয়েছে। ভর্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ বিভাগের এখতিয়ার।’
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ ও শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলা বিভাগ এবং কলা ও মানবিক অনুষদের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। তারা মতামত পাঠালে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো।’
আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কঠোর পরিশ্রম করে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। ফল অনুযায়ী জাবিতে ভর্তির ব্যাপারে নিশ্চিত থাকায় জবিতে ভর্তি হইনি। এখন সেপথও বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলের দায়ভার আমি নেব কেন?’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
/এসটি/
আরও পড়ুন: সেই চেয়ারম্যান ও শিক্ষককে নির্দোষ দাবি শিক্ষার্থীদের