রাজধানীর বনানীতে ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণীর দায়ের করা মামলার আসামি সাফাত আহমেদসহ পাঁচজন সোমবার (৮ মে) সিলেটে এসেছিল বলে জানা গেছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলামের ঠাকুরবাড়ি টিল্লাপাড়ার ‘রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে’ তারা রুম ভাড়া নিতে গিয়েছিল। কিন্তু রুম ভাড়া দেওয়ার আগে হোটেলের কর্মচারীরা তাদের কাছে ভোটার আইডি কার্ড চাইতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাফাত। এরপর সাফাত ও তার সহযোগীরা তড়িঘড়ি করে হোটেল ছেড়ে চলে যায়। বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন রিসোর্টের রেস্তোরাঁ অংশের ম্যানেজার মোবারক হোসেন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিসোর্টের নিয়ম অনুযায়ী কোনও পর্যটক রুম ভাড়া নিতে চাইলে আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়। যারা রিসোর্টে অবস্থান করবেন তাদের প্রত্যেকের যাবতীয় তথ্যও দিতে হয়। কিন্তু তারা হঠাৎ এসে কক্ষ ভাড়া নিতে চান। তখন তাদের কাছে ভোটার আইডি কার্ডসহ আনুষাঙ্গিক তথ্য চাওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত। এরপর তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাদের সঙ্গে থাকা প্রাইভেটকার নিয়ে চলে যান।’
তিনি আরও জানান, সাফাত ও তার সঙ্গীরা যে রুমে উঠতে চেয়েছিলো তার ভাড়া প্রায় ১২ হাজার টাকা।
রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের ম্যানেজিং পার্টনার হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘সোমবার (৮ মে) দুপুর ২টার দিকে পাঁচ যুবক রুম ভাড়া নিতে আসে। এ সময় তারা পরিচয়পত্রসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় তাদের রুম ভাড়া দেওয়া হয়নি।’ সাফাতকে কিভাবে চিনতে পারলেন- জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ওরা চলে যাওয়ার পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখে নিশ্চিত হতে পারি রিসোর্টে আসা যুবকদের একজন সাফাত আহমেদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশসহ অনেকেই ভিডিও ফুটেজ চেয়েছিলেন। কিন্তু রিসোর্টে কোনও সিসি ক্যামেরা না থাকায় আমরা কাউকে ভিডিও ফুটেজ দিতে পারিনি।’
পুলিশ সূত্র জানায়, সাফাতসহ তার সহযোগীদের সঙ্গে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। তারা যাতে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সিলেটের তামাবিল, জকিগঞ্জের করিমগঞ্জ, বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি ইমিগ্রেশন পুলিশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পুলিশের ধারণা রিসোর্টে যে পাঁচজন গিয়েছিল তাদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত সাফাত ছাড়াও মামলার অন্যান্য আসামি নাঈম, সাদমান ও গাড়িচালক বিল্লালও রয়েছে। তাদের ব্যবহৃত গাড়ির সন্ধান করছে পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, সাফাতসহ তার সহযোগীরা সিলেটে আছে এমন তথ্য পুলিশ জানতে পারলেও এখন নিশ্চিত হতে পারেনি। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে।
এদিকে, সাফাতের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় টিনশেডের তৈরি পুরো বাড়িটি খালি। ছয়টি কক্ষই তালাবদ্ধ। বাড়িতে কোনও লোক নেই। ঢাকা দক্ষিণ বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সাফাতদের বাড়ি। বাড়িটি প্রায় ১৬ বছর ধরে দেখাশোনা করে আসছেন কেয়ারটেকার মতিউর রহমান। তিনি জানান, ‘প্রতি বছর ঈদে বাড়ির মালিক দিলদার সাহেব এসে কিছু দান-খয়রাত করে চলে যান। তারা ছেলে সাফাত কোনও সময় গ্রামের বাড়িতে আসেন না। তবে পাঁচ বছর আগে বাড়ি বানানোর সময় তিনি এসেছিলেন।’
সম্পর্কে সাফাতের নানা মধ্যনগর গ্রামের বাসিন্দা কবীর আহমদে জানান, ‘সাফাত বেশ কয়েক বছর ধরে সিলেটে আসে না। তাকে ছোটবেলায় দেখেছি, তারপর আর দেখিনি।’ সাফাতের নানাবাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘অনেক আগে শুনেছি তার নানাবাড়ি সিলেটের শেখঘাটে। তার মামা সিলেটের পেপসি কোম্পানির ডিলার। পেপসি মতিন বললেই তাকে সবাই চেনে। তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী।’
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই শিক্ষার্থীদের জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। ওইদিনই তারা ওই ছাত্রীদের বনানীর কে-ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। মামলার এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, সেখানে জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালীন দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে মামলার সাফাত ও নাঈম। মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে।
/বিএল/এফএস/
আরও পড়ুন- বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামিরা শিগগিরই গ্রেফতার হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী