X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল দশা মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের

কাজী তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী
১৪ নভেম্বর ২০১৭, ১২:২১আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:১২

বেহাল দশা মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের অযত্ন আর অবহেলায় বেহাল দশা বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের। তার সমাধিস্থল রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদী গ্রামে এ স্মৃতিকেন্দ্রটি অবস্থিত। যা দেশের একটি সম্ভাবনাময় সাহিত্যের তীর্থস্থান।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার প্রায় এক যুগ পার হলেও স্মৃতি কেন্দ্রের সংগ্রহশালায় নেই কোনও নিদর্শন। ৬টি পদে নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও মাত্র দুই জন দিয়েই চলছে কেন্দ্রটি। নির্মাণের ১৩ বছরে হয়নি কোনও সংস্কার। মূল ভবনে ফাটল, বৃষ্টির পানি পরে, মাটি ধসে সীমানা প্রাচীর হেলে পড়েছে। গত সোমবার (১৩ নভেম্বর) ছিল মীর মশাররফ হোসেনের ১৭০তম জন্মবার্ষিকী। জীবনকালে তিনি লিখেছেন, বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য রচনা বিষাদ সিন্ধু, জমিদার দর্পন, গড়াই ব্রিজ, বসন্ত কুমারীসহ অনেক কালজয়ী লেখা। তিনি ছিলেন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এক অদম্য লেখক।

আরও জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে এক একর ৮৪ শতাংশ জমির ওপরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সম্ভাবনাময় এই স্মৃতিকেন্দ্রটি। তবে অযত্ন ও অবহেলায় দিন দিন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। লোকবলের অভাবে ব্যহত হচ্ছে সম্ভাবনাময় এই স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা। সাহিত্য প্রেমিক পর্যটকেরা হচ্ছেন বিমুখ।

বেহাল দশা মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের জেলার সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস বলেন, ‘মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের কেবল কাল পর্বেরই স্রষ্টা নন, তিনি বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা। পাঠক সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে গেছেন। আমরা তার স্মৃতি বিকাশে এলাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।’

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বিনয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলা একাডেমি একটু সুদৃষ্টি দিলেই স্মৃতিকেন্দ্রেটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর করা যায়।’

স্মৃতি পরিষদের সাহিত্য সম্পাদক সঞ্জীত কুমার দাশ বলেন, ‘স্মৃতিকেন্দ্র্রে মীর মশাররফ হোসেনের কোনও স্মৃতি নেই। এখানে অন্য অনেক লেখকের বই থাকলেও তার কোনও বই পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে আমি ‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসটি এখানে পাচ্ছি না।’

দর্শনার্থী মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে অনেক জেলার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র থাকলে আরও ভালো হতো।’

বেহাল দশা মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রের সমাজসেবক এম এ খালেদ পাভেল বলেন, ‘সারাবছর মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকে। শুধু ১৩ নভেম্বর জন্মদিন এলেই স্মৃতিকেন্দ্র ঝকঝক-তকতক করা হয়।’

রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার পাল বলেন, ‘প্রতিবছর মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়। কিন্তু দক্ষ সংগঠকের অভাবে নির্মাণের ১৩ বছরেও আলো ছড়াতে পারছে না স্মৃতিকেন্দ্রটি। তাই স্মৃতিকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়াতে ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন।’

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম রেজা বলেন, ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র সংস্কার করা জরুরি। এ ব্যপারে বারবার বাংলা একাডেমিকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।’

উল্লেখ্য, ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর মীর মশাররফ হোসেন কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে। তার বাবার নাম সৈয়দ মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলত নেছা। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীতেই কালজয়ী এই সাহিত্যিক মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বিবি কুলসুমের সমাধির পশ্চিম পাশে সমাহিত করা হয়।

আরও পড়ুন:
প্রতিবেশীর দেয়ালে আটকা তিন পরিবার

/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা