জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে নগরীর চাষাঢ়া এলাকায় হকারদের হামলায় আহত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন, ‘আজ শামীম ওসমান প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করেছেন। সেজন্য ডিসি-এসপিকে প্রত্যাহার করা উচিত। ডিসি এখানে বসে শুধু চাটুকারিতা করেন, একটা কাজও করেন না। শুধু ফোন করলে বলেন, আপনাকে সহযোগিতা করবো। কিন্তু কোনও সহযোগিতা করেন না।’
ডিসিকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘কী সহযোগিতা এপর্যন্ত করেছেন? আজ সকালে ডিসি ফোন করেন আামকে। আমি তাকে বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবের সামনে যাবো, কথা বলবো।’
এসপির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) রাতে আমি এসপিকে ফোন করলাম। বললাম, একজন সংসদ সদস্য ফুটপাতে হকারদের বসার নির্দেশ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আপনি কী করতে পারবেন? তিনি (এসপি) আমাকে বললেন, দলীয় এমপির নির্দেশ; আমি আর কী করবো। আমি বললাম, আমি কী দলের বাইরের কেউ? জনগণকে কি রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও দেবেন না? হকার্স মার্কেট করে দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও করে দেবো। যাইহোক, এই যদি হয় নারায়ণগঞ্জের এসপির উত্তর, তাহলে তার কি আর নারায়ণগঞ্জে থাকার অধিকার থাকে?’
সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন, ‘ডিসি সাহেব প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মানেন না। প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আছে, সিটি করপোরেশন যখন মিটিং ডাকবে, ডিসি-এসপি উপস্থিত থাকবেন। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তে ডিসি-এসপিসহ প্রশাসনের সবাই সহযোগিতা করবে। উনারা (ডিসি-এসপি) সিটি করপোরেশনের একটি মিটিংয়েও আসেননি।’
স্থানীয় এক পত্রিকার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফতুল্লার একটি পোশাক কারখানায় রাতের বেলা গিয়ে ডিসি-এসপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে মিটিং করেন। পোশাক কারখানায় গিয়ে তারা (ডিসি-এসপি) মিটিং করতে পারেন, অথচ সরকারের নির্দেশ মানেন না। সিটি করপোরেশনে যেতে ডিসি-এসপির লজ্জা লাগে! মানুষের হয়ে কথা বলতে তাদের লজ্জা লাগে। নারায়ণগঞ্জের অধিকারের কথা বলতে লজ্জা লাগে। কিন্তু, মিটিং করতে তাদের লজ্জা লাগে না। তারা কি সরকারের কর্মচারী নাকি ওসমান পরিবারের কর্মী?’
আইভী বলেন, ‘আমার ওপর আক্রমণ মানে নারায়ণগঞ্জের মানুষের ওপর আক্রমণ। শামীম ওসমান কোন আক্রোশে আক্রমণ করলেন; ২০১১ সালে নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন বলে, নাকি ২০০ ৮ সালে নির্বাচিত হননি বলে? এই শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর আক্রমণ করার কারণটা কী? উনি নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে কেন চাচ্ছেন? আমি তো হকার নিয়ে কোনও কথা বলিনি। একজন কাউন্সিলরের কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি (শামীম ওসমান) বলেন, ১০ হাজার হকারের পেটে লাথি মারা হয়েছে। আমি জানি, তিনি চাইলে হকারদের জন্য মার্কেট করে দিতে পারেন। তিনি তো শত কোটি টাকার মালিক। তার পরিবার কোটি কোটি টাকা দুবাই-মালয়েশিয়ায় পাচার করছে। সেই টাকা দিয়ে তিনি হকার্স মার্কেট করে দিতে পারেন। তার তো হকারদের জন্য খুব মহব্বত। নারায়ণগঞ্জের মানুষের হাঁটার অধিকার হরণ করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?’
শামীম ওসমানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি একাই যেতাম, মারতে চাইলে তিনি আমাকে মারতেন। আমার নিরীহ মানুষগুলোকে কেন মারলেন? তিনি (শামীম ওসমান) কী মনে করেছেন, এই পিস্তল আর প্রশাসন দিয়ে আমাকে থামিয়ে রাখবেন? দল যখন ক্ষমতায় থাকে না, কর্মীদের ফেলে রেখে তিনি শহর ছেড়ে চলে যান। তিনি আবার কিসের নেতা?’
মেয়র আইভী বলেন, ‘আমি তো পিস্তল নিয়ে চলি না। আমার তো ক্যাডার বাহিনী নেই। আমার সঙ্গে ১০-১২টা পিস্তল নেই। তাহলে আমার এবং আমার লোকজনের ওপর কেন হামলা চালানো হলো? শামীম ওসমানকে জনতার আদালতে এর জবাব দিতে হবে। ’