X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সমস্যার শেষ নেই

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:০৭আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:১৬

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সমস্যার শেষ নেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রুট পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। তবে এই ঘাট ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনই দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও হয়রানিসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়।

এই রুটে ভোগান্তি ও হয়রানির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকৃতির বৈরী আচরণ, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা, গাফিলতি এবং বুকিং কাউন্টারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা, শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্য সংকট, বর্ষা মৌসুমে উত্তাল নদী ও তীব্র স্রোতের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিংবা দিনের পর দিন ফেরিঘাটে বসে থাকতে হয়। এছাড়াও রয়েছে ফেরি-স্বল্পতাসহ ঘন ঘন ফেরি বিকল হওয়ার ঘটনা। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে গেল বছর বেশ কয়েক দফা ভাঙনের কারণে ফেরি লোড-আনলোড বিঘ্নিত হয়েছে। এসব সমস্যার বেড়াজালে আবদ্ধ ওই এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

সূত্রমতে, নানান অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপার হয় এই ফেরি দিয়ে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের এজিএম (বাণিজ্য) জিল্লুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘাট এলাকায় কিছু সমস্যা থাকবেই। ঘাটে এলেই সবাই আগে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভিআইপিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরি পার করতে হয়। এছাড়া বিরামহীনভাবে ফেরিগুলো চলাচল করায় মাঝে মাঝে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া নদীর নাব্য সংকটের কারণে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়।’

সিরিয়াল কাউন্টারে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কাউন্টারে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক ডিবি পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। সেখানে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনও সুযোগেই নেই। তবে ফেরি-স্বল্পতা, নদীর নাব্য সংকট, ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকায় পারাপারে দেরি হয়।’

ফেরির ফগ লাইট ক্রয় প্রকল্পে দুর্নীতি

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশা মোকাবিলায় ফেরির জন্য কেনা হয় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে দশটি ফগ লাইট। কিন্তু ওই লাইট ঘন কুয়াশার বিপরীতে সাড়ে ছয় মিনিটও চলতে পারেনি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে পরবর্তীতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে লাইট ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও নানান অজুহাতে আজও তা কার্যকর করা হয়নি।

বিআইডব্লিউটিসি মেরিন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ক্যাপ্টেন শওকত সরদার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফগ লাইটগুলো বাস্তবসম্মত ছিল না। সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছিল।’

তবে ফগ লাইট ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সমস্যার শেষ নেই রাডার স্টেশন ও সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা

কুয়াশা মোকাবিলায় ফগ লাইট স্থাপন করে ফল না পেয়ে এবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের ফেরিতে রাডার স্থাপনের কথা ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। শীতে ঘন কুয়াশায় যানবাহন পারাপার নিরবচ্ছিন্ন রাখতে রাডার স্থাপনের পাশাপাশি নৌরুটে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থাও করা হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই রাডার লাগানোর সুপারিশ করা হয়।

তবে ফেরি খাতের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাডার স্থাপন ও নদী পথে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে তার বাস্তবতা যাচাই করা উচিত। তা না হলে ফগ লাইট প্রকল্পের মতো এটিও ব্যর্থ হতে পারে। কারণ, যেখানে হাজার ওয়াটের ফগ লাইট কুয়াশা মোকাবিল করতে পারে না সেখানে সোলার বাতির ওপর ভরসা করা যায় না।’

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে সক্রিয় দালাল চক্র

যানবাহন পারাপারকে কেন্দ্র করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে সক্রিয় একাধিক দালাল চক্র। পাটুরিয়া ঘাটে পুলিশের কড়া নজরদারি আর বুকিং কাউন্টারে পুলিশের সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কারণে ঘাট এলাকায় সক্রিয় থাকে এসব চক্র। তারা অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে পরে আসা গাড়ি আগে ফেরি পারাপারে সুযোগ করে দেয়। ফলে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির সিরিয়াল থাকে। এছাড়া ঘাট এলাকায় ভিআইপি গাড়ি পারাপারের নামে শ্রমিকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয় এসব চক্রের সদস্যরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দূরপাল্লার কয়েকটি কোম্পানির বাস ভিআইপি তালিকাভুক্ত। এসব কোম্পানির গাড়ি নির্বিঘ্নে ফেরিতে উঠতে সহায়তা করেন স্টার্টাররা (শ্রমিকদের ভাষায়)। ঘাটে পৌঁছালে আরসিএল মোড় থেকে ওইসব গাড়ি ভিন্ন পথে সরাসরি ফেরিঘাটে নিয়ে যায় তারা। এজন্য গাড়িপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকা বাড়তি দিতে হয়।’

তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাফিক পুলিশের টিআই আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘাট এলাকায় প্রতিদিনই ভিআইপি গাড়ি থাকে। তাদের প্রটোকল দিতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কেউ যদি সুনির্দিষ্টভাবে ট্রাফিক পুলিশের কাছে এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

আরও পড়ুন:
আ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ধারণা, টিকিট পেলেই জয় নিশ্চিত


/এসএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ