X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল ছেড়ে হাওরের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:২৬আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ১১:২২

সরকারি কোনও বন্ধ নেই, নেই কোনও ঐচ্ছিক বা অন্য কোনও ছুটি, তবুও বন্ধ রয়েছে দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। গত দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসায় শিক্ষকরা পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন না। স্কুলের প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ-ই স্কুলে আসছে না, পরিবারের অভিভাবকদের নির্দেশেই তারা স্কুল ছেড়ে হাওরের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত। ছেলেরা হাওরে ধান কাটতে আর মেয়েরা বাড়িতে রান্নাবান্না, ধান সিদ্ধ ও শুকানোসহ ধানের গোলাজাতকরণের কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা আরও অন্তত ১৫ দিন চলতে পারে। এতে করে একদিকে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে নিয়মিত স্কুলে না আসায় সিলেবাস সময়মতো শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা।

স্কুল ছেড়ে হাওরের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে পুরো স্কুল ঘুরে দেখা যায়, স্কুল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা নিয়মমাফিক টানানো আছে, শিক্ষকরাও স্কুলে আছেন। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদানকক্ষে ঝুলছে তালা। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চগুলোতে নেই কোনও শিক্ষার্থী। স্কুলের দপ্তরি শিক্ষার্থীদের ক্লাসের আসার অপেক্ষা করে দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষ খোলা রাখতেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা না আসায় এখন তিনিও সব শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে চলে যান ফসল তোলার কাজে। শ্রমিকের সংকট ও মজুরি বেশি ও সামর্থ্য না থাকায় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুল পাঠানো বাদ দিয়ে ফসল তোলার কাজে নিয়োজিত করছেন। এতে তাদের অর্থ সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

স্কুলের দপ্তরি সুনীল দাস জানান, শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসায় ক্লাসরুমে তালা দিয়ে রেখেছেন।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র চম্পক চৌধুরী জানায়, এ সময় কোনও ছাত্রছাত্রী স্কুলে যায় না। বাড়িতে ও হাওরে বিভিন্ন কাজ করে। বৈশাখ মাসের পর তারা আবার নিয়মিত স্কুলে যাবে।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পলি আক্তার জানায়, তার বাবা-ভাই হাওরে ধান কাটার কাজ করে। তাকে বাবা ও ভাইয়ের জন্য প্রতিদিন দুপুরে খাবার নিয়ে হাওরে যেতে হয়। তাই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয় না।

স্কুল ছেড়ে হাওরের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা

অভিভাবক জলি তালুকদার বলেন, তিন ছেলেমেয়ের কেউ এখন স্কুলে যাচ্ছে না। তারা সবাই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে হাওরে ও বাড়িতে ফসল তোলার কাজ করে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য ছদরুন নূর বলেন, প্রতিবছর বৈশাখ মাসে ধান কাটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা চলে।

স্কুলের শিক্ষক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নূর মিয়া বলেন, বৈশাখ মাসে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দিলে এবং অতিরিক্ত ক্লাস করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যেত।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি পুরো হাওর এলাকার চিত্র। একমাত্র ফসল বোরো ধান ঘরে তুলতে পরিবারের ছেলেবুড়ো সবাই এখন মাঠে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে।

/এএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া