আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা সৈয়দপুরে ৪০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রমজান মাসজুড়ে ওই মেরামত কাজ করবেন কারখানার শ্রমিকরা। এসব কোচ আগামী ৩ জুনের মধ্যে রেলওয়ে পরিবহন বিভাগে হস্তান্তর করা হবে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অধিকতর সেবা দিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিম অঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
৪০টি কোচ মেরামতের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। কারখানার শ্রমিকরা তাদের নিয়মিত কাজের বাইরে এই কোচগুলো মেরামত করছেন বলে জানান সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস)।
সরেজমিন দেখা যায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপ, বগি শপ, জেনারেল ওভারহোলিং শপ, পেইন্ট শপসহ পুরো কারখানার শ্রমিকরা ব্যস্ত। শ্রমিকরা সমানতালে ঈদ সামনে রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচ মেরামতের কাজ।
ক্যারেজ শপের শ্রমিকরা জানান, কারখানায় লোকবল সংকট থাকার কারণে শ্রমিকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে ।
ওই কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে আমাদের কাজের চাপ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কারণ ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে অতিরিক্ত কোচ মেরামতের চাপ থাকে। ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত (ওভারটাইম) কাজ করতে হয় শ্রমিক কর্মচারীদের। এই অতিরিক্ত কাজের জন্য শ্রমিকরা কোনও পারিশ্রমিক পান না। এ নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন। তারা অতিরিক্ত কাজের সম্মানীর টাকা মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদে ওভারটাইমের সম্মানী দাবি করেছেন তারা।
সূত্র জানায়, ৩ হাজার ১৭১ জনবলের বিপরীতে কারখানায় কর্মরত আছে মাত্র ১ হাজার ২০ শ্রমিক-কর্মচারী। শতকরা হিসেবে ৬৮ ভাগ জনবল ঘাটতি রয়েছে। ফলে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এই জনবল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৪০টি কোচ মেরামত করে কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করাটা চাপ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবারের ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে পশ্চিম অঞ্চলের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ঢাকা-রাজশাহী রুটে ননস্টপ বনলতা আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেছে। এদিকে, আগামী ২০ মে’র মধ্যে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে নতুন একটি ননস্টপ ট্রেন চালু হবে। এসব ট্রেনে (কোচে) ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা অত্যাধুনিক কোচ সংযোজন করা হয়েছে।
এছাড়া, সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় মেরামত করা ৪০টি কোচের বিশেষ ট্রেন ঢাকা-পাবর্তীপুর ও ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল করবে।
রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, ‘আমরা ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি। কিন্তু জনবল সঙ্কটের কারণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।‘
তিনি বলেন, ‘সড়কপথে দুর্ঘটনা ও হয়রানিসহ যানজট এড়াতে এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে যাত্রীরা দিন দিন ট্রেনমুখী হয়ে উঠেছে। ফলে ট্রেনমুখী অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য ৪০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে।‘
এ ব্যাপারে রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) জয়দুল ইসলাম বলেন, ‘শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবো। শ্রমিক কর্মচারীর ওভারটাইমের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে। আশা করি কারখানার জনবল সংকট দ্রুত কেটে যাবে। ঈদে যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই লক্ষ্যে কারখানায় কাজ চলছে।’ যে গতিতে কাজ হচ্ছে তাতে ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।