X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে গুদামে ধান দেয় প্রভাবশালীরা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
২৬ মে ২০১৯, ১১:৩৯আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ১১:৫২

ধান বিক্রি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও খাদ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট গুদামে ধান দেয় বলে অভিযোগ কৃষকদের। এতে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নিতে তারা বাধ্য হন।

একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষি অফিস কৃষকদের একটি তালিকা তৈরি করে। তবে তালিকা করলেও সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস কৃষকের কাছ থেকে ধান নেয় না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে সিন্ডিকেটের ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়। এতে প্রতিমণ ধানে সিন্ডিকেট আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া কৃষক গুদামে ধান নিয়ে গেলেও ধানে চিটা ও পরিষ্কার না এমন অজুহাতে কৃষকদের ফিরিয়ে দেন কর্মকর্তরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জানান, ধান সংগ্রহের সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপের কারণে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নিতে বাধ্য করা হয়। সিন্ডিকেট কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে ধান নেয়। ফলে প্রকৃত কৃষকরা সরকারের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বাসাইলের কলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কার্ড পেলেও দালালদের কারণে আমাদের কাছ থেকে ধান নেওয়া হয় না। আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কখনও ধান বিক্রি করতে পারেননি।’

মির্জাপুরের তরফপুর গ্রামের কৃষক বকুল মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে ধান নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে কখনও আমাদের জানায়নি।’

সখীপুর উপজেলার কালিদাস গ্রামের বাছেদ মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে ধান কেনার বিষয়টি জানি। শুনেছি, অনেক কৃষক গুদামে ধান নিয়ে ফিরে এসেছেন। এ জন্য হয়রানির ভয়ে কখনও ধান নিয়ে যায়নি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ৫ হাজার ২৬০ মেট্র্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। ধান কাটা প্রায় শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। তবে এ মাসের শেষের দিকে ধান সংগ্রহ করা শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, ‘এখনও কৃষকদের তালিকা করা শেষ হয়নি। সরকারিভাবে ধান দেওয়ার বিষয়ে কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করা হয়। ধান সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা শুধু কৃষকদের তালিকা করে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠাই।’

বাসাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ বলেন, ‘উপজেলায় এবার ৩৪১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রাথমিক একটি তালিকা পেয়েছি। খুব দ্রুতই মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করা হবে।’

টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও মির্জাপুর উপজেলায় ধান সংগ্রহ করা শুরু হয়ে গেছে। দু-একদিনেই মধ্যেই বাকি উপজেলাগুলোতে ধান সংগ্রহ করা শুরু হবে।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও ফড়িয়া সিন্ডিকেট বা দালালদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকেই নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহ করা হবে।’ 

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে কৃষি কাজ করেন। যাদের কার্ড রয়েছে। তারা তো সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে পারবেন। তারা যদি সরকারিভাবে ধান দিতে যায়, তখন সাধারণ মানুষ তাদেরকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মনে করে।’

ক্ষমতাসীন দলের বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকারিভাবে গুদামে ধান দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কী হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। এবার প্রকৃত কৃষক ছাড়া কেউ সরকারিভাবে ধান দিতে পারবে না।’

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ