বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এবার নিজের ভাইয়ের ছেলেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ। ২০১৬ সালে প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পরের বছর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান তিনি। এর এক বছর পার না হতেই কোনও গবেষণাপত্র ছাড়াই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাকে। বর্তমানে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের বিভিন্ন নথি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নথিপত্রগুলো মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
নথিতে দেখা যায়, উপাচার্যের ভাইয়ের ছেলে খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ ২০১৬ সালের ১১ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির সেকশন অফিসার পদে আবেদন করেন। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ফল ছিল দ্বিতীয় শ্রেণি (৫০ শতাংশ ও ৪৮ শতাংশ)। সেই সময় তিনি সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পান। ওই পদে বছরখানেক চাকরি করার পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে ২০১৭ সালের জুন-জুলাই মাসে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে।
এর এক বছরের মধ্যেই ২০১৮ সালের ২২ জুলাই কর্তৃপক্ষ সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। একই বছর ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির রিজেন্ট বোর্ডের ২৫তম সভায় খোন্দকার মাহমুদ পারভেজকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তাকে বিভাগটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও দেওয়া হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে উল্লেখ আছে, যদি প্রার্থীর গবেষণাপত্র না থাকে তাহলে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হতে হলে অন্তত তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া, দুই বছরে যদি কেউ প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হতে চান, তাহলে তার অন্তত একটি প্রকাশনা থাকতে হবে। পারভেজের এর কোনোটিই নেই বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অন্য তিন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া থাকলেও পারভেজের এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য দেওয়া নেই।
সহকারী অধ্যাপক হতে হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কী যোগ্যতা চাওয়া হয় জানতে চাইলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার জানামতে দুই বছরের অভিজ্ঞতা এবং দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত থাকা লাগে।’ তার বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ কীভাবে এক বছরের মধ্যে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গবেষণাপত্র প্রকাশের কোনও তথ্য থাকতে পারে। তবে, এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নুরুদ্দিন বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নথিপত্র সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।’ পারভেজ এক বছরের মধ্যে কীভাবে সহকারী অধ্যাপক হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে নিয়োগ বোর্ড জানে।’ পারভেজের কোনও গবেষণাপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিসের কাগজপত্র দেখে পরে বলতে হবে। এখন তো অফিস বন্ধ।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খোন্দকার মাহমুদ পারভেজকে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।