X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত নেতার বাড়িতে লুকিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল সম্রাটের!

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৫৪আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৪৯

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সীমান্তবর্তী এই বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতারের আগে সদ্য বহিষ্কৃত ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট কুমিল্লায় এক জামায়াত নেতার বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। ওই বাড়িটি সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে পালিয়ে যেতে তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাড়ির দোতলা থেকে র‌্যাব সদস্যরা সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান আলীকে আটক করে। বাড়ির মালিক ওই জামায়াত নেতার নাম মনির চৌধুরী। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের মৃত সোনা মিয়া চৌধুরীর ছেলে।

সম্রাটকে আটকের সময় মনির চৌধুরী ও তার শ্যালক ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের মেয়র আলাউদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সম্রাট ও তার সহযোগী দরজার বাইরে তালা দিয়ে ভেতরে লাইট জ্বালিয়ে থাকতেন। সন্ধ্যার আগে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতেন। মানুষের সামনে যেতেন না।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাবের কয়েকটি গাড়ি মনির চৌধুরীর বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে আরও কিছু গাড়িতে আসা প্রায় অর্ধশতাধিক কালো পোশাকধারী র‌্যাব সদস্য বাড়িটি ঘিরে ফেলে। রাত ১১টার দিকে দোতলার একটি কক্ষ থেকে সম্রাট ও আরমান আলীকে বের করে আনে র‌্যাব সদস্যরা। পরে রাত সোয়া একটার দিকে তাদের নিয়ে ওই বাড়ি ত্যাগ করে র‌্যাবের গাড়ি।
জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামটি সীমান্তের কাছাকাছি। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে পালিয়ে যেতে সম্রাট ওই জামায়াত নেতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে চারটি পরিবার ছিল। এখন তারা কেউ বাড়িতে থাকেন না। সবাই পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন। মনির চৌধুরীর পরিবার ঢাকায় থাকে, তিনি থাকেন ফেনীতে। তার স্টার লাইন পরিবহন ব্যবসা এবং ব্রিকফিল্ড রয়েছে ফেনীতে।
মনির চৌধুরীর ভাতিজি সামিয়া জান্নাত চৌধুরী ও তার মা নূর নাহার বলেন, ‘মনির চৌধুরী বাড়িতে থাকেন না। তিনি ফেনীতে থাকেন। তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে শুধু অসুস্থ মা থাকেন। মাকে দেখাশোনা করার জন্য বিবাহিত বোন স্বামীসহ থাকেন। সম্রাট যে ঘরে ছিলেন ওই ঘরের দরজার বাইরে সবসময় তালা লাগানো দেখা যেত। কিন্তু ভেতরে জ্বালিয়ে রাখা লাইটের আলো চোখে পড়তো। সন্ধ্যার আগে দুইজন মানুষ পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতেন। মানুষের সামনে আসতেন না। বাড়িতে আর কোনও পুরুষ না থাকায় এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা হতো না।’
তারা আরও জানান, বাড়িতে সম্রাট আত্মগোপন করার পর মনির চৌধুরী বাড়িতে ঘন ঘন আসতেন। সঙ্গে তার শ্যালক ফেনীর পৌর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিনও আসতেন। সমাদর দেখে সামিয়া ও তার মা বুঝতেন সম্রাট ও তার সহযোগী মেহমান।
সামিয়া জান্নাত চৌধুরী আরও জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা টেলিভিশন দেখছিলেন। হঠাৎ কয়েকটি গাড়িতে আসা র‌্যাব সদস্যরা তাদের বাড়িতে ঢোকে। এরপর আরও কয়েকটি গাড়িতে র‌্যাব সদস্যরা এসে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। কয়েকজন র‌্যাব সদস্য তাদের ঘরে ঢুকে খোঁজ-খবর নেয়। কিছু সময় পর র‌্যাব সদস্যরা সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান আলীকে ভবনের দোতলা থেকে নামিয়ে আনে।
গ্রামের বাসিন্দা সাদেক হোসেন ও মফিজুর রহমান বলেন, ‘চৌধুরী বাড়িতে কেউ থাকেন না। সবাই পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন। মনির চৌধুরীর দুটি ঘর। বাড়িতে গেলে একটিতে থাকেন। অন্যটিতে তার মা আর বোন স্বামী নিয়ে থাকেন। এই বাড়িতে এলাকার মানুষের চলাচল কম। তবে কয়েকদিন ধরে বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় দুই জন ব্যক্তিকে দেখা যেত। পুকুরে বরশি দিয়ে মাছ ধরতেন। ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে তাদের দেখা যায়।’
আবদুল কুদ্দুস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘মনির চৌধুরী ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। পরে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তিনি ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের মেয়র আলাউদ্দিনের বোনকে বিয়ে করেন। ফেনীতে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। ২০১৩-১৪ সময়ে তার ভাতিজা নাজিম চট্টগ্রামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এছাড়া তার আরেক ভাতিজা তসলিম কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ককটেলসহ আটক হয়। পরে ফেনীর এই মেয়রের মাধ্যমে পুলিশের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনে। মনির চৌধুরী এবং তার বাড়ির সবাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন তাদের সহযোগিতা করে আসছেন।’
চৌদ্দগ্রাম আলকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, ‘রাত ১১টার সময় শুনেছি র‌্যাব সদস্যরা কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। পরে সকালে জানতে পারি মনির চৌধুরীর ঘরে আত্মগোপনে থাকা সম্রাটকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। যার বাড়ি থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি একজন জামায়াত নেতা। ওই বাড়ির সবাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না