X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

ফেসবুক পোস্টের কারণে বহিষ্কৃত আ.লীগ নেতা যা বললেন

খুলনা প্রতিনিধি
১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:০৪আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৫৯

ডা. শেখ বাহারুল আলম ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো নিয়ে ফেসবুকে লেখা পোস্ট করায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ডা. শেখ বাহারুল আলমকে। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমার ফেসবুক পোস্টে সরকার বা দলীয় প্রধানের নাম আমি উল্লেখ করিনি। আমি কেবল জনদাবির কথাগুলো বলার চেষ্টা করছি।’

বুধবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ডা. শেখ বাহারুল আলমকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করে ফেসবুকে সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে না, আগামী সাত দিনের মধ্যে সেই কারণ দর্শানোর জন্য সভা থেকে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে হলে অবশ্যই অভিযুক্ত সদস্য বা নেতাকে নোটিশ দিতে হয়। কী বক্তব্যে গঠনতন্ত্রের কোনও ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে, তা তাকে জানাতে হয়। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। প্রয়োজন হলে তার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়। এর কোনোটাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেননি। নির্ধারিত কোনও সভা ছিল না। ওইদিন যে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সে সভা পূর্বনির্ধারিত কোনও সভাও ছিল না। সভায় আমার বিষয়টি নিয়ে কোনও এজেন্ডাও ছিল না। অন্য একটি বিষয়ে সভা চলছিল। সেখানে থেকে নেতাকর্মীদের ডেকে এনে অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরোটাই ওনার (সভাপতির) একতরফা কাজ। এক ধরনের স্বৈরাচারী প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই তিনি এ কাজ করেছেন। অভিযোগ আনতে হলে ওনার (সভাপতি) বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনতে হয়। কারণ, উনি (সভাপতি) দলের গঠনতন্ত্র, নিয়মনীতি কিছুই মানেন না।’

ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের একজন সদস্য তার দেশের স্বার্থ, তার দেশের বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র বা দেশের ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা বলতেই পারেন। সে বিষয়ে ভিন্নমতও থাকতে পারে। ভারতের বিষয় নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমাদেরও কিছু স্বার্থ আছে। আমাদের জনগণের কিছু দাবি-দাওয়াও আছে, যা উপেক্ষিত হওয়া ঠিক না। এ বিষয় নিয়ে আমার ফেসবুক পোস্টে তিনি কোথায় আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলাভঙ্গ পেলেন? আমার কোনও মতামতও তিনি নেননি। আমি কোনও চিঠিও পাইনি। তবে শুনেছি। বিষয়টি সত্য নয়। ফলে মোকাবিলা করার কিছু নেই। চিঠিও পাইনি এখনও। চিঠি পেলে প্রতিটি লাইন ধরে ধরে জবাব দেওয়া হবে।’ ডা. শেখ বাহারুল আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাস

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ডা. বাহারুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন, সেখানে সরকার এবং দলের প্রধান বিরোধী বক্তব্য আসছে। আমাদের জানা মতে, দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন তার সবই দেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বার্থেই করেছেন। এখানে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়ে ডা. বাহারুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। জাতির জনক বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তার বাংলাদেশে কখনও স্বার্থসংশ্লিষ্টতা থাকবে না−এমন কোনও চুক্তি জননেত্রী শেখ শেখ হাসিনা করতে পারেন না। যার অনেক নজির আছে। বিগত দিনে দেশের কোনও সরকার বা দলীয় প্রধানের এ ধরনের নজির নেই। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাই দেশের প্রথম, যিনি দেশের স্বার্থ একচুলও ছাড় দেন না। তার বিষয় নিয়ে ডা. বাহারুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিন্দনীয় এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ কারণেই দলীয় জরুরি সভা করে আমরা তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের মধ্যে তিনি চিঠিও পেয়ে যাবেন। সদুত্তর না পেলে আমরা তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাবো।’

উল্লেখ্য, ডা. বাহারুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো−

“ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বলা হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত–বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ ও অধিকার চরম উপেক্ষিত

...........................

দুর্বল অবস্থানে থেকে বন্ধুপ্রতিম শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বৈঠকে-ফলাফল শক্তিধরের পক্ষেই আসে। বাংলাদেশ-ভারত উভয়-পক্ষীয় সমঝোতা স্মারক নাম দেওয়া হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয় দুর্বল রাষ্ট্রকে।

ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সকল স্বার্থই আদায় করে নিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এখনও ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি।

১) দীর্ঘদিনের আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন এবারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় স্থান পায়নি।

২) ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্‌ হুংকার দিয়েছেন নাগরিকপঞ্জিতে বাদপড়া জনগণকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হবে। তারপরেও এবারের সমঝোতা চুক্তিতে ‘অভ্যন্তরীণ’ অজুহাতে বিষয়টি স্থান পায়নি।

৩) বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত কিছু বলেনি।

৪) তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুপ থাকলেও বাংলাদেশ অংশের ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরা রাজ্যের পানীয় জল হিসাবে প্রতিদিন ১.৮২ কিউসেক টেনে নেবে ভারত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।

৫) বাংলাদেশের জনগণের তরল গ্যাসের চাহিদা পূরণের ঘাটতি থাকলেও ভারতে তরল গ্যাস রফতানির সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং যৌথভাবে সে প্রকল্প উদ্বোধনও হয়েছে।

৬) চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারত কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য ভারতের কোনও বন্দর সেই তালিকায় ছিল না।

অমানবিক আচরণের শিকার হয়েও বাংলাদেশ পানি ও গ্যাস সরবরাহ দিয়ে মানবিকতা প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ ও অধিকার উপেক্ষিত রেখে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হয়েছে।

শক্তিধর প্রতিবেশীর আধিপত্যের চাপ এতোই তীব্র যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে কিনা আশঙ্কা হয়। কারণ, ভারতের চাপিয়ে দেওয়া সকল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হচ্ছে।”

আরও পড়ুন... ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ: খুলনায় আ.লীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার

/এফএস/এমএমজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
পঞ্চগড়ে হাসনাত আবদুল্লাহআ.লীগ চাঁদাবাজি করে ভারতে পালিয়ে গেছে, আপনারা পালানোর পথও পাবেন না
ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের খবর শুনে বাবার মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল