জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শততম বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা করেছে সরকার। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আগামী ১৭ মার্চ থেকে বছরব্যাপী সারাদেশে চলবে নানা আয়োজন। জাতির জনকের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার মানুষও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন করবেন। এ উপলক্ষে এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশের ছোট খাল—যেখানে তিনি গোসল করতেন, যে স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেছেন; এসব স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ১৯২৭ সালে জিটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৩০ সালে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়েই লেখাপড়া করেন। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. সিবরুল ইসলাম বলেন, ‘তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা স্কুলটিতে জাতির পিতার নানা দুর্লভ ছবি নিয়ে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি করেছি। যেটি গত ৭ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেছেন।’
টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার বাড়ির পাশেই বয়ে যাওয়া ছোট খাল এবং ঘাটের হিজল গাছ অনেক স্মৃতি বহন করে চলেছে। এই হিজল গাছের নিচে খালের ঘাটে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন। সেই হিজল গাছটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। শুধু এই হিজল গাছ বা হিজল তলাই নয়; বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালের খেলার মাঠ, তিনি যে পুকুরে গোসল করতেন, যে স্কুলে বাল্যকালে লেখাপড়া করেছেন, তার আদি পুরুষেরা যেখানে বসবাস করতেন—এমন সব জায়গা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে টুঙ্গিপাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর এসব স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ইতোমধ্যে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ। এসব স্থান দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরতে পৌর কর্তৃপক্ষ সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে; যেন বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দর্শনার্থীরা এসে জাতির পিতার বাল্যকাল কোথায় কীভাবে কেটেছে, সে সম্পর্কে জানতে পারেন।
টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী শেখ বোরহানউদ্দিন জানান, এখানে খালের ঘাটে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন, খালে সাঁতার কাটতেন, হিজল তলায় অবসর সময় কাটাতেন। বিভিন্ন কাজের জন্য এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু নৌকায় বের হতেন।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ আহমেদ হোসেন মীর্জা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে তাঁর বাড়ির পাশের খালের পাড় ও হিজল গাছের চারপাশ বাঁধাই করা হয়েছে। প্রতিদিনই জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত হিজল তলাসহ খালটি পরিদর্শনে আসেন শত শত বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। সারাদিন নানা বয়সের দর্শনার্থীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে অনুভব করেন বঙ্গবন্ধুর স্পর্শ।’
মেয়র আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য হিজল তলাসহ বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন যেখানে যেখানে পড়েছে, সে জায়গাগুলো আমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাবছরই গোপালগঞ্জে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা সম্পর্কে মানুষ আরও জানতে পারবে বলে আমরা মনে করি।’