বাগেরহাটের বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন চীনসহ বিভিন্ন দেশের দুই হাজারেও বেশি নাগরিক। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসব চীনা নাগরিক ও চীন ফেরত বাঙালিদের তালিকা তৈরি করে তাদের নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা সিভিল সার্জন অফিসকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাগেরহাট সিভিল সার্জন অফিস সেই তালিকা তৈরি করতে পারেনি। এমনকি তাদের কাছে তেমন কোনও তথ্যও নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে চীনের তিন জন নাগরিকসহ পাঁচ জনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার পর তাদের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনার পর বাগেরহাটে করোনা আতঙ্ক দেখা দেয়। এরপরও বিদেশ ফেরতদের পর্যবেক্ষণে রাখার বিশেষ কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
পুলিশের একটি বিশেষ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন দুই হাজার ১৮২ জন বিদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে চীনের ১৫৭ জন, মালয়েশিয়ার একজন, ভারতীয় দুই হাজার ১৭ জন, ব্রিটিশ পাঁচ জন, জার্মান এক জন ও দক্ষিণ কোরিয়ান এক জন।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় আট জন, ফকিরহাট উপজেলায় ৩৫ জন, মোল্লাহাট উপজেলায় ১৮ জন, কচুয়ায় দুই জন, শরণখোলায় ১৯ জন, রামপালে এক হাজার ৯৪২ জন এবং মোংলায় ১৬২ জন বিদেশি কাজ করছেন। তারা কে কবে নিজ নিজ দেশে বা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোথায় যাচ্ছেন সেসম্পর্কিত তথ্য কারও কাছে নেই।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার চার জন চীনা নাগরিকের দুই জন খেগড়াঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ দেখাশোনা করেন। অপর দুই জন চাঁপাতলা এলকায় টিকে গ্রুপের হার্ডবোর্ড তৈরির প্রকল্পে কাজ করেন।
ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী এলাকায় সাউথ ইস্ট ইউনিয়ন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৫ জন চীনা শ্রমিক কাজ করেন। মোল্লাহাটের একশ’ মেগাওয়াট মধুমতি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করেন ১৮ জন চীনা নাগরিক। কচুয়া উপজেলায় ফেব্রিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে দুই জন, শরণখোলায় রায়েন্দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ দেখাশোনা করেন ১৯ জন চীনা নাগরিক। রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৪৭ জন চীনা, এক জন মালয়েশিয়ান, এক হাজার ৮৯৪ জন ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।
এছঅড়া মোংলা ইপিজেডসহ বিভিন্ন এলকায় কর্মরত রয়েছেন ৩২ জন চীনা, ১২৩ ভারতীয়, পাঁচ জন ব্রিটিশ, একজন জার্মান ও একজন দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ওসি মো. আলী নেওয়াজ বলেন, ‘দুই হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।’ নিয়ম অনুসারে, বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানের তথ্য প্রতিমাসে আপডেট করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয় বলেও জানান তিনি।
বিদেশিদের তালিকা না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমাউন কবির বলেন, ‘মোংলা বন্দরে আসা বিদেশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঁচ জন ডাক্তার ও পাঁচ জন্য সেকমো পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শরণখোলায় কিছু চীনা নাগরিক কাজ করেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হবে।’