‘কোনও কাজ নাই, আমরা উপোস আছি, আমরার কেউ খোঁজ লয় না। ১০ টাকা করি সরকারে হুনছি বাজারে চাল বিক্রি করে, কিন্তু আমরা চাল লইতে পাররাম না। আমরা খাইতাম কিলান আর চলতাম কিলান, কেউ আমরার খবর লয় না। কেউ দিলে খাই, নাইলে উপাস থাকতে অয়।’ পরিবার নিয়ে কয়েকদিন থেকে উপোস থাকার কথা জানালেন সিলেট সদর উপজেলার ৩নং খাদিম নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কুসাল গ্রামের বাসিন্দা ৯০ বছরের বৃদ্ধ মখই পাত্র।
তিনি জানান, তার বয়স ৯০ বছর হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত বয়স্ক ভাতার কোনও কার্ডও পাননি।
শুধু কুসাল গ্রাম নয় চা বাগান লাগোয়া মাখড় খলা, দা ধারানি গ্রামসহ আশপাশ গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। এইসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর। করোনাভাইরাসের কারণে তাদের কর্মযজ্ঞ বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। পাহাড়-টিলা থেকে লাকড়ি কেটে বাজারে নিয়ে বিক্রিও করতে পারছেন না ভয়ে।
সোমবার (৩০ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে মাখড় খলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়- টিলা থেকে কেউ লাকড়ি, কেউ শাক আবার কেউ কিছু আলু নিয়ে রাবার বাগানের গাছের নিচে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে আছেন। তাদের সবার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
মাখড় খলা গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আজাদ মিয়া বলেন, 'করোনা নামের কী একটা রোগ আসছে, যার জন্য কেউ কাজ করাতে চায় না। আমি ছোট থেকে কৃষিকাজ করে পরিবার চালাই। কিন্তু এখন কৃষিকাজ না পেয়ে পাহাড় থেকে লাকড়ি কেটে নিয়ে এসেছি। এগুলো বাজারেও বিক্রি করতে পারবো না, এখন বাজারে বসতে দেয় না ব্যবসায়ীরা। বলে পুলিশ এসে মারবে। তাই ভয়ে যাই না। যদি গ্রামের কেউ লাকড়িগুলো কেনেন, তাহলে রাতের খাবার খাবো। নাহলে উপাস থাকতে হবে। সরকার ১০ টাকা করে বাজারে চাল বিক্রি করে কিন্তু আমরা পাই না।'
শ্যামল পাত্র নামের আরেক দিনমজুর বলেন, 'আমরা দিন মজুর মানুষ। পাহাড়-টিলা থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে পরিবার নিয়ে চলি। সারাদিনের মধ্যে একবেলা খাবার খেলে আরও দুবেলা খাবারের কোনও খোঁজ খবর নাই। শেখের বেটির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে আমরা সহযোগিতা চাই, কিছু চাল-ডাল দিলে খেয়ে বাঁচতে পারবো। এই কষ্টের সময় আমারা কারও কাছ থেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। '
কমলি পাত্র নামের ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, 'সব জায়গাতে শুনি, সরকার দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কিচ্ছু পাই না।'
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মহুয়া মমতাজ জানান, কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যাদের ঘরে খাবার নেই, গ্রাম থেকে তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে বরাদ্দ পৌঁছে দেবো।