X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএনওর ত্রাণ ফান্ডে নিজেদের দেওয়া অনুদান কোথায় খরচ জানেন না ইউপি চেয়ারম্যানরা!

নাদিম হোসেন, সাভার
১৮ এপ্রিল ২০২০, ০১:২৫আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২০, ০১:৫৮

সাভার

করোনা দুর্যোগে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার শ্রমিকদের জন্য ত্রাণ ফান্ড খুলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাভেজুর রহমান। অনেক চেয়ারম্যান সে টাকা দিলেও এই অনুদান কোথায় খরচ হয়েছে তা জানেন না কেউ। বিষয়টি খোলাসা করেননি ইউএনও পাভেজুর রহমানও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার দুর্যোগে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার জন্য সরকারিভাবে (জি আর) ১শ’ টন চাল আর শিশু খাদ্যসহ নগদ টাকা ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এই এলাকা শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারণে দেশের যে কোনও জেলার জনসংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ এখানে বসবাস করছেন। জনসংখ্যার তুলনায় এই বরাদ্দ খুবই সামান্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। ফলে তাদের স্থানীয় ভোটারদের ত্রাণ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সাভার উপজেলার একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি বরাদ্দ পাওয়া চাল শেষ হয়েছে বহু আগেই। এখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা। আর এরমধ্যেই নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমানের গঠিত করোনা ফান্ডে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ বলেন, করোনায় খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করার কথা বলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের প্রত্যেক চেয়ারম্যানকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এক মিটিং-এ নির্দেশ দেন। তিনিও নির্বাহী কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী নগদ ৫০ হাজার টাকা তার কাছে দিয়ে এসেছেন। এছাড়াও ধামসোনার চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ১ লাখ টাকা করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। তবে তিনি পরে গরিবদের বরাদ্দের জন্য কোনও নগদ টাকা অনুদান পাননি।

বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল দাবি করেন, নির্বাহী কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছেন। তবে তাদের দেওয়া টাকা দিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা কোথায় বা কাদের সহযোগিতা করবেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে এই টাকা ব্যাংকে না নিয়ে নগদ গ্রহণ করা হয়েছে।

লকডাউনে পড়ায় টাকা দিতে না পারলেও নির্দেশটির কথা জানান ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার।

আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন বলেন, কেউ ৫০ হাজার আবার অনেকেই এর বেশি পরিমাণেও  টাকা দিয়েছেন।

 

তবে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, আমার কাছেও টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, আমি কোনও টাকা দেইনি।

তাদের অভিযোগ, অনুদানের টাকা উত্তোলনের পর থেকে অদ্যাবধি উপজেলার কোথাও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়নি নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার কাশেম ভিলা নামক একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেখানে বসবাস করেন অন্তত ১০ থেকে ১৫টি পরিবার। তাদের অভিযোগ, ফেসবুকে উপজেলা প্রশাসনের হট লাইন নম্বরে খাদ্য সহায়তার জন্য তিন দিন যোগাযোগ করেও ত্রাণ মেলেনি। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, নম্বরটিতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। সাভারের অধিকাংশ মহল্লার চিত্র প্রায় একই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব বলেন, উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত ১০০ টন চালের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে তাদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি চালের খবর তারা জানেন না। এছাড়া চালের পাশাপাশি নগদ ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হলেও তা চেয়ারম্যানরা পাননি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্বাহী কর্মকর্তার উপজেলা বাসভবনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকরা। সেখানে সকলকে ত্রাণ নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি আ. মজিদ সরদার অভিযোগ করেন, কারখানার শ্রমিকরা এ্ই অঞ্চলের ভোটার না হওয়ার কারণে তাদেরকে কেউ ত্রাণ সহযোগিতা দিতে চাচ্ছে না। তার অভিযোগ, এই শ্রমিকদের সহায়তার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি ইউএনও কেউ সহযোগিতা করেননি। আর শ্রমিকদের অভিযোগ, এই এলাকার ভোটার না হওয়ার কারণে কেউ তাদের ত্রাণ দেয়নি।

উত্তোলন করা টাকা নির্বাহী কর্মকর্তা কোথায় ব্যবহার করেছেন বা কোনও এলাকার মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী হিসেবে পৌঁছে দিয়েছেন এমন তথ্য সাভার পৌর, থানা ও আশুলিয়া থানা এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি।

তবে ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে করোনায় সহযোগিতার জন্য টাকা আদায়ের কথা জানতে যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাভেজুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে এবং হবে। ত্রাণ নিয়ে কোনও লুকোচুরি করা হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি জানতে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ