গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার (আবদার) এলাকায় রাতে ঘরে ঢুকে মোবাইল ফোন চুরির সময় চিনে ফেলায় মা ও তিন সন্তানকে জবাই করে পারভেজ (২০)। এছাড়া হত্যার পর সে দু’জনকে ধর্ষণও করেছে। রবিবার (২৬ এপ্রিল) গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে পারভেজ।
রবিবার রাতে উপজেলার আবদার এলাকা থেকে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে। সে একাই চারটি খুন করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২৩ এপ্রিল নিজ বাড়ি থেকে প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১২) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলের (৮) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান জানান, পারভেজকে গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বসতঘর থেকে রক্তমাখা কাপড়, মাটির নিচ থেকে মোবাইল ফোন, তিনটি গলার চেইন, কানের দুল ও লুট করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। পারভেজ জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
জবানবন্দিতে পারভেজ জানায়, ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার সময় কাজলের স্ত্রী ও বড় মেয়ের টাচ মোবাইল ফোন চুরির উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী বাবুলের বাড়ির পেছনে যায়। সেখান দিয়ে ওই বাড়ির ছাদে ওঠে। পরে নিজের কাছে থাকা ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানো রশি কাটে। রশি ছাদের গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে দোতলার বাথরুমের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে ঢুকে। পরে সে নুরা ও হাওয়ারিনের রুমে প্রবেশ করে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। তখন নুরার কানে হেডফোন ও ছোট বোন হাওয়ারিন ঘুমিয়ে ছিল। আনুমানিক ১ ঘণ্টা পর সবাই ঘুমিয়েছে ধারণা করে সে নিচতলায় নেমে রান্নাঘরে প্রবেশ করে। রান্নাঘর থেকে ধারালো বঁটি নিয়ে মোবাইল ফোন নেওয়ার জন্য দোতলায় ওঠে। ঘরের দরজা খোলার শব্দে স্মৃতি ফাতেমা জেগে উঠে বাথরুমে ও আশপাশে কেউ আছে কিনা খোঁজ করে। এ সময় স্মৃতি ফাতেমা তাকে দেখে চিনে ফেললে চিৎকার দেয়। তখন সে বঁটি দিয়ে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপায়। তিনি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। শব্দ পেয়ে নুরা ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে নুরার ছোট ভাই ফাদিল জেগে উঠলে তার মাথায় কোপ মারে। পরে সে ফ্লোরে পড়ে গেলে তাকে জবাই করে নুরার খাটের নিচে রাখে। তারপর হাওয়ারিন ঘুম থেকে জেগে চিৎকার দিলে তাকেও কোপায়। পরে সে নুরাকে ধর্ষণ করে। নুরার মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে অর্ধমৃত হাওয়ারিনকেও ধর্ষণ করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর নুরার মায়ের গলায় একটি স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও একটি কানফুল ও একটি নাকফুল খুলে নেয়। হাওয়ারিনের কান থেকেও স্বর্ণের রিং খুলে নেয়। পরে আলমারি খুলে দুটি স্বর্ণের চেইন, একটি আংটি, একটি লাল রঙের ছোট ডায়েরি, নুরার মায়ের রুম থেকে দু’টি বড় টাচ মোবাইল নেয়। এরপর সে হাত-মুখ ধুয়ে পেছনের গেট খুলে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
গাজীপুর জেলা আদালতের ইন্সপেক্টর মীর রকিবুল হক জানান, সোমবার গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয় পারভেজকে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালত পারভেজকে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, পারভেজের নামে এর আগে একটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার মামলা রয়েছে।
শিশুটির বাবা জানান, ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার সাত বছরের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পারভেজ। এ ঘটনায় পারভেজের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরে বয়স বিবেচনায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয় পারভেজ।
তিনি জানান, জামিনে মুক্তির পর পারভেজ তার পরিবারের লোকদের নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা ধরনের চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। মামলা তুলে না নিলে তাকেসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হত্যার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজসহ তার বাবা-মা ও স্বজনদের অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
