X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কেন্দুয়ার সেই ওসি’র অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
২০ জুন ২০২০, ২১:১০আপডেট : ২০ জুন ২০২০, ২১:১৫

নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে তাকে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অপসারনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে এগারোটায় নির্যাতিতের পরিবারের সদস্য ও নেত্রকোনার সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় থানার ওসি’র এমন নির্যাতনের ঘটনার জন্য তাকে অপসারণের মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্তের সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভুইয়া, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান জনি, নির্যাতনের শিকার চিরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, তার স্ত্রী রত্না আক্তারসহ আরও অনেকে।

মানববন্ধনে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা মোফাজ্জল হোসেন ভুইয়া বলেন, এই ওসি বারবার কেন্দুয়ার সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছি, ধর্ষিতার মামলা না নিয়ে ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্ষিতাকে অপবাদ দিচ্ছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষদের নানাভাবে অহেতুক হয়রানি করছে। কেউ তার বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নালিশ বা লিখিত অভিযোগ করলে তাদেরও থানায় ডেকে এনে হুমকি দিচ্ছে। ওসির এই হুমকির শিকার হচ্ছে চিরাং ইউনিয়নের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ও বর্তমান চিরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। এই গোলাম মোস্তফা কিছুদিন আগে ওসির বিরুদ্ধে আইজিপি মহোদয়ের বরাবরে অভিযোগ করায় তাকে গত ৪ জুন থানায় ধরে এনে অন্যায়ভাবে মারধর করে। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই পুলিশ কর্মকর্তার এই বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে, বর্তমান পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই কেন্দুয়া থানার ওসিকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।

জেলা কৃষক লীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, এই ওসিকে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করলে তার অনেক অপকর্মের বিষয়ে কেন্দুয়ার সাধারণ মানুষ মুখ খুলবে। বর্তমানে ওসি রাশেদুজ্জামানের ভয়ে কেউ কিছু বলতে চাচ্ছে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে তাকে পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান তিনি।

মানববন্ধনে উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান জনি বলেন, গোলাম মোস্তফা একজন সাবেক ছাত্রলীগের নেতা এবং তার অতীতের প্রশংসিত কাজের জন্যই তাকে ইউনিয়ন যুবলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করে গোলাম মোস্তফার ওপর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

কেন্দুয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান

এসময় গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি ওসি রাশেদুজ্জামানের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আইজিপি বরাবরে অভিযোগ করার কারণে তিনি বারবার আমাকে হুমকি প্রদর্শন করতেন। পরে গত ৪ জুন রাতে আমাকে থানায় ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। বর্তমানে আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তাসহ এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অতি জরুরিভিত্তিতে প্রত্যাহার ও এই ঘটনার তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রত্না আক্তার মানববন্ধনে বলেন, ওসি প্রতিহিংসামূলক ভাবে আমার স্বামীকে থানায় মিথ্যা জুয়ার মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে বেধড়ক মারধর করে। পরে আমি তাকে আদালত থেকে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করি। ন্যায়বিচারের জন্য ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু এখনও সেই ওসি এখানে স্বপদে বহাল রয়েছেন। বর্তমানে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানায় ধরে এনে আগের ক্ষোভ মেটাতে যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফার পশ্চাদ্দেশে মারতে মারতে তাকে অজ্ঞান করে ফেলেন ওসি রাশেদুজ্জামান।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েকশত সাধারণ মানুষ অংশ নেন। 

নেত্রকোনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি জানান, এই বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর, দোষী সাব্যস্ত হলে এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য যে ৪ জুন কেন্দুয়ার সাউথপাড়া এলাকা থেকে গোলাম মোস্তফা, দুজন কাউন্সিলর, একজন ইউপি সদস্যসহ ৯ জনকে জুয়া খেলার অভিযোগে থানায় ধরে আনে পুলিশ। পরে গোলাম মোস্তফা ওসির বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আইজিপি বরাবরে অভিযোগ করায় তাকে ওই রাতে থানা হাজত থেকে বের করে পশ্চাদ্দেশসহ সারা শরীরে অমানুষিক নির্যাতন করে ওসি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে ৮ জুন ডিআইজি বরাবরে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। বর্তমানে অভিযোগটি আইজিপি ও জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুতিনের চীন সফর: শি’র মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন রুশ নেতা
পুতিনের চীন সফর: শি’র মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন রুশ নেতা
খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের বাজেট দাবি
খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের বাজেট দাবি
ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার: প্রধান বিচারপতি
ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার: প্রধান বিচারপতি
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
কোথায় কীভাবে কেএনএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়, জানালেন নারী শাখার প্রধান
কোথায় কীভাবে কেএনএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়, জানালেন নারী শাখার প্রধান