X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

এক দশকে দ্বিগুণের লক্ষ্য নিয়ে বাঘ কমেছে দুই তৃতীয়াংশ!

মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্লা, খুলনা
২৮ জুলাই ২০২০, ২০:২৭আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২০, ১২:৩২

সুন্দরবনের বাঘ ( ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবি)

২০২০ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রথম চালু হয় বিশ্ব বাঘ দিবস। আজ ২৯ জুলাই (বুধবার) ২০২০ সালের সেই দিনটি এসেছে। পৃথিবীর অন্য অঞ্চলে বিপন্ন বাঘ সংরক্ষণে যেমন উদ্যোগই থাকুক না কেন, সুন্দরবনে এজন্য অনেক প্রকল্প হাতে নিয়ে এবং এক দশক ধরে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হলেও বাঘের সংখ্যার উন্নয়ন ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে আনুমানিক ধারণা ছিল সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ৩৭৫টি, ১৯৮৪ সালে গবেষণালব্ধ এই ধারণা ছিল ৪৫০টির মতো। আর ১৯৯২-৯৩ সালের জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৩৬২টি। তবে এখন সর্বশেষ গবেষণায় ১১৪টির বেশি বাঘের তথ্য নেই বন বিভাগের হাতে। এ অবস্থায় এক দশকের বাঘ দ্বিগুণের লক্ষ্যে নেওয়া বিশ্ব বাঘ দিবসের অনুষ্ঠানে বড় করুণ মুখে আগের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ থাকার তথ্য দিয়ে নতুন কী কর্মসূচি নেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সেটাই এখন দেখার।

জানা গেছে, এবার করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত আকারে হবে বিশ্ব বাঘ দিবসের অনুষ্ঠান। জাতীয় কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. সাহাব উদ্দিন এমপি ও উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে খুলনা ও বাগেরহাটে সীমিতভাবে কর্মসূচি পালিত হবে।

বিশ্ব বাঘ দিবসে স্বভাবতই আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশের জাতীয় পশু ও গর্বের ধন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আশঙ্কাজনক সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি। জাতীয় প্রতীক, পরিচয়, খেলার মাঠে নিজেদের টাইগার পরিচিতি ইত্যাদিতে বাঘের জাতি হিসেবে নিজেদের মেলে ধরলেও প্রকৃতির প্রকৃত বাঘ রক্ষায় যে ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই। গবেষকরা বলছেন, বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে গবেষণালব্ধ যে কারণগুলো রয়েছে সেগুলোর দিকে নিবিড় মনোযোগ দিতে হবে এখনই।

সুন্দরবনে বিচরণ করছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। (ছবি: ইউএনবি)

বাঘের আবাস

বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ বনাঞ্চল বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। এ বনের জল-স্থলে বাঘের জন্য রয়েছে প্রচুর বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য হরিণ, বানর, কাঠবিড়ালি, গিরগিটি, শুশুক, ভোঁদড়, কুমির ইত্যাদি।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলছেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘ বিচরণ করে। এদের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র বাগেরহাটের কটকা, কচিখালী ও সুপতিসহ খুলনার নীলকমল, পাটকোষ্টা ও গেওয়াখালী এবং সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি ও কৈখালী এলাকা।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার (সংগৃহীত ছবি)

সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রকৃত সংখ্যা কত?

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বুবার্ট হেনড্রিকস সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৮২ সালে মার্গারেট স্যালটার নমুনা ও সরেজমিন জরিপ চালিয়ে ৪২৫টি বাঘ থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এর দুই বছর পর রেক্স জিটিন্স সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন।

সুন্দরবন এলাকায় কাজ করেন এমন লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিল বন বিভাগ। পরের বছর সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছিলেন।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের গবেষণায় সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়। এতে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে আমেরিকার দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাঘ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যামেরার সাহায্যে গণনা করা হয়। খুলনা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগ এ প্রকল্পকে জনবল ও ৭০টি ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু করে। যার ফলাফল ২০১৮ সালেই প্রকাশ করা হয়। ওই ফলাফলে সুন্দরবনের ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ৩ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে ৮টি বাঘ বৃদ্ধির চিত্র ফুটে ওঠে।

সর্বশেষ বাঘশুমারিতে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ চলাচল করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি পাওয়া যায়। পরে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সর্বশেষ এই জরিপে সুন্দরবনের ২৩৯টি জায়গায় গাছের সঙ্গে ৪৯১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। ২৪৯ দিন ধরে চালু রাখা ক্যামেরাগুলোতে বাঘের ২,৫০০টি ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ১১৪টি বাঘ থাকার কথা অনুমান করেছেন। বাঘের প্রকৃত সংখ্যা বন বিভাগের কাছে নেই।

তবে বাঘের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ প্রায় অসম্ভব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ জামান এ বিষয়ে ২০১৭ সালে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, কয়েক স্তরের জরিপ ছাড়া কেবল একটা দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে কী সংখ্যক বাঘ রয়েছে তা নিরূপণ সম্ভব নয়। ফলে একেকবার একেকরকম তথ্য পাওয়া গেছে। 

সুন্দরবনে গত ১৩ জুলাই মারা যাওয়া একটি বাঘ

কেন কমে যাচ্ছে বাঘ?

ওপরের এই তথ্যে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, ১৯৯০ সালের পর থেকেই সুন্দরবনের ভেতরে বাঘের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে।  বনজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়া, চোরা শিকারিদের উৎপাত, বনের রাজা আশপাশে থাকলে নিজেই শিকার হয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি কারণে বাঘের ওপর মানুষের হামলা ও অত্যাচার বেড়েছে ১৯৯০ পরবর্তী তিন দশকে। বন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন দশকে বনজীবীদের বনের ভেতরে ঢোকার পারমিটও অতীতের তুলনায় অনেক বেশি দেওয়া হয়েছে। বনজ সম্পদ লুটের ঘটনাও ঘটেছে অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় বেশি। 

১১৪টি বাঘ থাকার তথ্য প্রকাশের পর ২০১৫ সালে তদানীন্তন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল বাকি বাঘগুলো কোথায় গেলো তখন তিনি বলেছেন, ‘ভারতে বেড়াতে গেছে’। হেঁয়ালিপূর্ণ এ জবাবের পর সরকারের কোনও মন্ত্রী বাঘের সংখ্যা নিয়ে আর কানও উত্তর দেননি। সত্য বটে পশু-পাখি-প্রাণীর অবাধ চলাচলের স্বার্থে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবনের সীমান্তের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি; তবে সত্যিই বাঘ আসলে কোথায় গেছে নাকি বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেটা সরকারিভাবে খুঁজে বের করা জরুরি।

সুন্দরবন নিয়ে যারা গবেষণা করেন এমন বিশেষজ্ঞ এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘের চলাচলের এলাকায় মানুষের বিচরণ, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া, শিকারের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলবায়ুগত পরিবর্তন, ঝড় বাদলে বাঘের আশ্রয়স্থলের ক্ষতি ইত্যাদি নানা কারণে বাঘের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা পড়ছে। এছাড়াও চোরা শিকারির গুলিতে বা ফাঁদে নিহত বা আহত হওয়া, পিটিয়ে হত্যা, বাঘের বাচ্চা চুরি, নানা রোগ-বালাইয়ে অসুস্থ হওয়া ইত্যাদি কারণও রয়েছে। সামনে সুন্দরবন ঘেঁষে রামপাল কয়লা প্রকল্প চালু হলে এবং বনের ভেতর দিয়ে অবাধে পণ্যবাহী জাহাজের অবাধ যাতায়াত অব্যাহত থাকলে সুন্দরবনের অভিজাত্য এবং বাঙালির গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়তো আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। 

সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবনের বাঘ কমে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততাসহ নানা কারণে বাঘ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার বন বিভাগের নিরাপত্তা দিতে না পারা, শিকারিদের হানা, খাদ্য সংকটে বাঘ বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসা, আর পিটুনিতে মৃত্যু হচ্ছে।

তার অভিযোগ, সুন্দরবন রয়েছে অভিভাবকহীন অবস্থায়। এখানে দায়িত্বে থাকার পরও বন বিভাগ অসহায়। পানি, মৎস্য, ভূমি বিভাগসহ কোনও বিভাগের মধ্যে সুন্দরবন নিয়ে সমন্বয় নেই। যে যার মতো করে সুন্দরবনে খবরদারি করে থাকে। এ অবস্থার উত্তরণ জরুরি। সুন্দরবনের জন্য সুনির্দিষ্ট অভিভাবক দরকার।

সুন্দরবনের বাঘ (সংগৃহীত ছবি)

প্রতিকারে বন বিভাগের উদ্যোগ

সুন্দরবন বিভাগের পশ্চিম বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশিরুল আল মামুন বলেছেন, এখন বাঘরক্ষায় বাঘের আবাসস্থল সুরক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে। পাশাপাশি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাঘের রোগ নির্ণয়সহ বাঘের চরিত্র বোঝার বিষয় নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। ন্যাশনাল টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু ৩ বছরের এ কার্যক্রমের ফলাফলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

আগামী ২০২২ সালে আবারও বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে গণনা করার কথা রয়েছে। এর আগে বাঘের আবাসস্থল সুরক্ষা ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ৩ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনার আওতায় ন্যাশনাল টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে।

সুন্দরবন বিভাগের পূর্ব বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, দিবসটি পালনে এবার সীমিত আকারে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আর প্রস্তাবিত টাইগার কনজারভেশন কর্মসূচি অনুমোদন হলে বাঘসহ হরিণ, শূকরও গণনা ও সুরক্ষার আওতায় আসবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় সাবেক বন কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান বলেন, টাইগার কনজারভেশন কর্মসূচির খসড়া জমা দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ৪ বছরে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ৫০ কোটি টাকা প্রকল্প প্রস্তাব রয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বাঘ, হরিণ, শূকরসহ সুন্দরবনের প্রাণী গণনা করা হবে। আর বনকর্মী ও আশপাশ এলাকার জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, সামগ্রিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করাসহ কিছু কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

অবাক করা সুন্দরের পসরা মেশানো সবুজ সুন্দরবন। (ছবি: আবুল হাসান, মোংলা প্রতিনিধি)

বন বিভাগের তথ্যমতে, বনে স্মার্ট পেট্রোল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ২ বিভাগ মিলিয়ে ৪টি করে ৮টি স্মার্ট পেট্রোল রয়েছে। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের নদী ও খালে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ ফুটের কম প্রস্তের খালে সারা বছরই মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। স্মার্ট পেট্রোলের পাশাপাশি বন বিভাগের নিয়মিত টহল ও অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সুন্দরবনে যে অঞ্চলগুলোতে বাঘের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি এমন ১,৬৫৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরায় ১,২০৮ বর্গকিলোমিটার, খুলনায় ১৬৫ বর্গকিলোমিটার ও বাগেরহাটের শরণখোলায় ২৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব এলাকার জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ গড়ে তোলা হচ্ছে। সুন্দরবনে অভয়ারণ্যের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমও গঠনের কাজ চলছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওতাধীন এলাকায় বিভিন্নভাবে ২২টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে দুষ্কৃতকারীদের হাতে ১০টি, জনতার গণপিটুনিতে পাঁচটি, স্বাভাবিকভাবে ছয়টি এবং ২০০৭ সালের সিডরে একটি বাঘের মৃত্যু হয়। এ সময়ের মধ্যে ১৬টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন এলাকায় ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গণপিটুনিতে নয়টি এবং বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে সাতটি বাঘের মৃত্যু হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের প্রতিটি বাঘ তাদের আবাসস্থলের জন্য ১৪ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার (হোমরেঞ্জ) চিহ্নিত করে সেখানে বাস করে। আর সুন্দরবনজুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণ করে থাকে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডের হুয়ানে অনুষ্ঠিত হয় টাইগার রেঞ্জ দেশসমূহের ‘এশিয়া মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স’। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হয় প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হবে। সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণে ৯ দফা পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা।

আরও পড়ুন:
সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু 

/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত