ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের অন্যতম পর্যটন স্থান চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা। ফলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলসহ দেশের একমাত্র হরিণ, কুমির ও বাটারগুল বাচকা কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রটিতে বন্যপ্রাণীরা গভীর সংকটে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যা থেকে রক্ষা পায়নি কুমিরের ডিম তা দেওয়ার উঁচু মাটির একাধিক কেল্লা। তাই এ বছর প্রাকৃতিকভাবে কুমিরের বাচ্চা বৃদ্ধির বিষয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের তুলনামূলক উঁচু স্থান হিসেবে পরিচিত করমজল পর্যটন কেন্দ্রও তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। লবনাক্ত পানিতে করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ট্যাংকগুলো ডুবে রয়েছে। তবে বেষ্টনী থাকায় এখানকার কুমির, বাটারগুল বাচকা কচ্চপগলোকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তবে সুন্দরবনে অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় বিচরণরত কুমিরগুলোর আবাসস্থল ও ডিম পাড়ার অসংখ্য মাটির কেল্লা ডুবে গেছে। ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা বৃদ্ধি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত দুদিনের অতিরিক্ত পানির কারণে উঁচু স্থান করমজলও কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই বনের অন্যান্য স্থানের চিত্র আরও খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।’ ওই কর্মকর্তা মনে করেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বেশ কিছু পুকুর খনন করলে জলাধার তৈরি হবে। পাশাপাশি, খনন করা মাটি দিয়েই উঁচু কেল্লা তৈরি করে বন্যপ্রাণীগুলোকে সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে।
মো. আজাদ কবির আরও জানান, করমজল প্রজনন কেন্দ্রের সব প্রাণী ও কুমিরের জন্য দেওয়ালের পাশে থাকা উঁচু মাটির কেল্লার ডিম পানি থেকে এখনও সুরক্ষিত রয়েছে। এখানকার ৯৬টির মধ্যে ৩৫টি ডিম মাটির কেল্লায় প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এবং ৬১টি কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটরে সুরক্ষিত রয়েছে। পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
এ বিষয়ে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বের মতো সুন্দরবনের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রাণিকূলকে রক্ষার জন্য বনের অভ্যন্তরে উচুঁ মাটির কেল্লা করা প্রয়োজন। সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের ভেতর পুকুর খনন এবং পুকুরের পাড় উচুঁ করে সেখানে দুর্যোগকালে প্রাণীদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।’ এটি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান।