পাটের ভালো ফলন এবং বাজারে ভালো দাম থাকায় এবার চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ প্রসঙ্গে নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের সরাটারী গ্রামের পাট চাষী আজগার আলী বলছিলেন, 'পাটা (পাট) এবার হাটোত (বাজার) নিগির নাগে না বাহে, বাড়িত থাকি পাইকারের ঘরে দরদাম করি নিয়া যায়ছে। এতে হামার যাওয়া আইসা খরচও বাছে, বাড়তি ঝামেলাও নাই। গতবার থাকি পাটার আদর হইছে খুব।' তিনি জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ওই জমিতে পাটের ফলন হয়েছে ৩৬ মণ। আর প্রতি মণের দাম পেয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে।
জেলার মুখ্য পাট পরিদর্শক মো. বরজাহান আলীও এবার পাটের বাজারের রমরমা অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পাটের চাষ হয়েছে ছয় হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদিত পাটের পরিমাণ ৭২ হাজার ৩৮৮ বেল। জেলা সদরসহ ছয় উপজেলায় পাটের কাঙ্খিত ফলন অর্জিত হওয়ায় কৃষক বেজায় খুশি। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অর্জিত হয়েছিল ১০ হাজার ১৩৩ বেল। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার ২৫৫ বেল পাট। অর্জিত পাটের মধ্যে সদর ৩ হাজার ২০, সৈয়দপুর ৯০, ডোমার এক হাজার ৪০০, ডিমলা ৫৬৫, জলঢাকা এক হাজার ৬০০ ও কিশোরগঞ্জ ৩১০ হেক্টর জমিতে অর্জিত হয়েছে।
সদরের টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরি পাড়ার পাট চাষি খোকন মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১২ মণ। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেলে সামনে পাটের আবাদ আরও বাড়বে।
এ অঞ্চলের কৃষকরা দেশি, তোষা, মেশতা, রবি-১ মহারাস্ট্র জাতের পাটের আবাদ করেছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ বেশি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি বিঘায় ১২-১৪ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। চলতি বছর পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের পাট ব্যবসায়ী এনতাজ আলী ও কামরুজ্জামান জানান, এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও বেশি। প্রতিমণ পাট ২৪০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
একই এলাকার পাট চাষি আশরাফ আলী জানান, গত বছরের তুলনায় বাজারে দাম ভালো পেয়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, জেলায় এবার পাটের আবাদ ভালই হয়েছে। কৃষকের অর্থকরী ফসল সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট হারিয়ে যেতে বসেছিল। বর্তমানে বাজারে পাটের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে পাট চাষ দিন দিন বাড়ছে।