X
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫
২৪ বৈশাখ ১৪৩২

পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নারীদের অংশ না নেওয়ার পরামর্শ হেফাজতের

চট্টগ্রাম ব্যুরো
১১ এপ্রিল ২০১৬, ২১:২২আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৬, ০০:০৬

পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নারীদের অংশ না নেওয়ার পরামর্শ হেফাজতের পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বরণের নামে বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুখে উল্কি আঁকা এবং নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণকে অনৈসলামিক ও বিজাতীয় সংস্কৃতি আখ্যায়িত করে এসব থেকে দূরে থাকতে মুসলিম জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এছাড়া বিবৃতিতে গত বছর বর্ষ বরণের সময় টিএসসি এলাকায় যৌন নির্যাতনের বিষয়টিকে সামনে এনে এবারের বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে নারীদের অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেয় সংগঠনটি। 
সোমবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, বর্ষবরণের নামে মূলত মুসলমনাদের ঈমান-আকিদাবিরোধী ভিনদেশি হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। নতুন বছরের প্রথম দিন বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে র্যা লি বের করা হয়। এখানে কার কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? ইসলামের বিশ্বাস মতে কোনও জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না।
তারা বলেন, মুসলমানদের বিশ্বাস মতে ভালো-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সব কিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলমানকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই। সুতরাং মুসলমানদের জন্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার সংস্কৃতি চর্চা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখের নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে নারী সমাজের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন-নির্যাতনের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, নারী-পুরুষের অবাধ চলাচলের বহুমুখী ক্ষতিকর দিক রয়েছে। শুধু গতবছর নয়, এর আগেও বহুবার বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতন ও নারীদের সম্ভ্রমহানির মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। তাই মা-বোনদের প্রতি আহ্বান, তারা যেন বর্ষবরণের নামে ইসলামবিরোধী বিজাতীয় এসব অনুষ্ঠানে শরিক হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা আরও বলেন, বর্ষবরণের উৎসবের নামে নারী-পুরুষ পরস্পরের মুখে উল্কি আঁকা, জীবজন্তুর মুখোশ পরা, নারীরা লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করে কপালে শাখা-সিঁদুর লাগিয়ে সম্মিলিত উলুধ্বনি দেওয়া, এগুলোর সবই হিন্দু ধর্মীয় রীতি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এসব পালন করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদের জন্যে এসব পালনের কোনওই সুযোগ নেই। তাছাড়া পান্তা-ইলিশের নামে যে সংস্কৃতির চর্চা এখন চলে থাকে, তাও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কোনও অংশ নয়। বরং এটা গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া কোটি কোটি মানুষের দারিদ্রতার সঙ্গে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।

হেফাজত নেতারা প্রশ্ন রেখে বলেন, বাঘ-ভাল্লুক ও সাপ-বিচ্চুর মঙ্গল শোভাযাত্রা কার প্রতিনিধিত্ব করছে এবং পান্তা-ইলিশে দেশের কত ভাগ মানুষ শরীক হওয়ার সক্ষমতা রাখে?

তারা আরও বলেন- ঈমান-আকিদার প্রশ্ন ছাড়াও এসব অনুষ্ঠানে নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তাগত বিভিন্ন ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, মানুষের চেহারা ও বেশ দেখে বুঝার উপায় নেই যে, কার ভেতরে কোন চিন্তা কাজ করছে। এ কারণেই ইসলাম অনাত্মীয় নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ অনুমোদন করে না এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই পর্দার বিধান জারি করেছে।

বিবৃতিতে হেফাজত শীর্ষ নেতারা ঈমান-আকিদাবিরোধী শিরকি এসব প্রথা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, একদিকে ধর্মহীনতার চর্চা এবং অন্যদিকে ইসলাম ও আলেম সমাজের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও কটূক্তি সমান্তরালভাবে চলছে। জাতি হিসেবে আমাদেরকে কোন দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা প্রত্যেকেরই গভীরভাবে ভাবা দরকার।

হেফাজত নেতারা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার নামে দেশে দৃশ্যত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আদর্শিকভাবে জাতিকে ধর্মহীন করার উদ্যোগই চলছে। বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ইসলামি শিক্ষাকে সংকোচিত করা হয়েছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানসহ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পৌত্তলিক কালচার, বেহায়াপনা ও নগ্নপনা এখন রীতি হয়ে ওঠছে। ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, মার্কেটে, জনসমাগমে, টেলিভিশন, সিনেমায় সর্বত্রই এখন ভোগ-বিলাসিতা ও যৌনউদ্দীপক আচরণের ছড়াছড়ি। কথায় কথায় উলামা-মাশায়েখ, ইসলামী শিক্ষা এবং দাড়ি-টুপি ও হিজাবধারীদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কটূক্তি, অপবাদ ও হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এসবের কুফল যে কতটা ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে, গত বছরের পহেলা বৈশাখের ঘটনায় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।

বিবৃতিদাতারা হলেন- হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী, নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা তফাজ্জল হক হবিগঞ্জী, মাওলানা আব্দুল মালেক হালিম, মাওলানা হাফেজ শামসুল আলম, মাওলানা মুফতী মুজাফফর আহমদ, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা সলিমুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি, মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী প্রমুখ।

/এইচকে/এএইচ/

আরও পড়ুন:

গণমাধ্যমে বৈশাখী ভাতা দাবি সাংবাদিক সংগঠনগুলোর

বর্ষবরণে সাদা-লাল পোশাক ঐতিহ্য নয়, কেবলই ফ্যাশন

/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি ‘স্পষ্ট ও বাস্তব’, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি ‘স্পষ্ট ও বাস্তব’, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
মহানির্বাণ
মহানির্বাণ
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কাঁপছে দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শঙ্কার মেঘ
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কাঁপছে দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শঙ্কার মেঘ
কক্সবাজার পৌর এলাকা থেকে দৈনিক ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে পড়ছে
কক্সবাজার পৌর এলাকা থেকে দৈনিক ৩৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে পড়ছে
সর্বাধিক পঠিত
‘তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি’
‘তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি’
ফিরে গেছে কুয়েত ও তার্কিশ এয়ারের ঢাকাগামী ২ ফ্লাইট
পাকিস্তানে ভারতের হামলাফিরে গেছে কুয়েত ও তার্কিশ এয়ারের ঢাকাগামী ২ ফ্লাইট
সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক আসিফ-হাসনাতের
সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক আসিফ-হাসনাতের
‘সকালে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয় এএসপি পলাশের, দুপুরে অফিসে নিজ মাথায় গুলি’
‘সকালে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয় এএসপি পলাশের, দুপুরে অফিসে নিজ মাথায় গুলি’
সিঁদুর অভিযান: ভূপাতিত ভারতীয় বিমানের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা
সিঁদুর অভিযান: ভূপাতিত ভারতীয় বিমানের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা