X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের কাজ থমকে থাকায় বাড়ছে ভোগান্তি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
১১ আগস্ট ২০২০, ২০:১৮আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২০, ২০:২০

জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের বেহালদশা চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৭ মে কার্যাদেশ পাওয়া জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের ১৮ কিলোমিটার উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা গত বছরের ২৬ আগস্ট। ১৫ মাসের নির্ধারিত সময়ে কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২৫ মাস অর্থাৎ এ বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২৫ মাস অতিবাহিত হলেও কাজটির বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৬ ভাগ। অথচ উন্নয়নের জন্য কাজের শুরুতেই সড়কটির কার্পেটিং তুলে সময় মত কাজ শেষ না করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন বিকল হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। 

সরেজমিন রবিবার (৯ আগস্ট) সকালে ওই সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো সড়কে পাথর ও বালি মিশ্রণ করে ফেলে রাখা দীর্ঘদিন থেকে। কার্পেটিং না হওয়ায় যানবাহন চলাচল করার কারণে পুরো সড়কই ঢেউ খেলানোর মত হয়ে গেছে। ফলে কোনও যানবাহন দ্রুত চলতে পারছে না। দুলে দুলে চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। কোনও কোনও জায়গায় গর্ত হয়ে পানি জমে গেছে। ১৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে। শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যায়। কোনও ভাবেই চলাচল করা যায় না। অত্যন্ত ঝাঁকুনির কারণে প্রসবকালীন ব্যথা নিয়ে জয়পুরহাট হাসপাতালে ওই পথে আসা একাধিক প্রসূতির সড়কেই সন্তান প্রসবেরও ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রতিদিন কোনও না কোনও যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে সড়কটির দুরবস্থার জন্য।  









এলাকাবাসী জানায় জেলার সঙ্গে আক্কেলপুর উপজেলা সদরের সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র পথ এটি। প্রতিদিন এ পথে জেলা থেকে আক্কেলপুরে যাত্রীবাহী অসংখ্য বাস চলাচল করে। ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া হিলি বন্দর থেকে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক এ পথেই বগুড়ার সান্তাহার ও নওগাঁসহ সারা দেশে আসা-যাওয়া করে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে উন্নয়নের নামে সড়কটি অকেজো করে রাখা হয়েছে। অথচ কাজটি দ্রুত শেষ করার দাবিতে ইতোপূর্বে জেলায় মানববন্ধন এবং পরিবহন ধর্মঘটও হয়েছে। এরপরও সড়কটির উন্নয়ন কাজে গতি আসেনি।  
সড়ক ও জনপথের (সওজ) জয়পুরহাট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের চারটি সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজের জন্য ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পের আওতায় ২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাট শহরের বাটার মোড় থেকে আক্কেলপুর বাজার পর্যন্ত দরপত্র আহবান করা হয়। কাজ পায় ধ্রুব কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সওজ সূত্র আরও জানায়, প্রথমে এ কাজে ২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এটি বাড়িয়ে ২৮ কোটি ২০ লাখ করা হয়।  
২০১৮ সালের ২৭ মে কার্যাদেশ পেয়ে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট কাজ শেষ করার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। ওই সময়ে অর্ধেক কাজও করতে পারেনি তারা। পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে সময় বাড়ানোর আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যে তারা জামালগঞ্জের চারমাথা ও জয়পুরহাট শহরের বাটার মোড় থেকে নতুন হাট এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করে। 

সওজের চলমান বিশেষ প্রকল্প, উন্নয়ন প্রকল্প, পিএমপি কাজ বাস্তবায়নের জোনভিত্তিক হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২৮ কোটি ২০ লাখ টাকার সড়ক উন্নয়ন কাজের অফিসিয়ালি হিসেবে ৫৬ শতাংশ অগ্রগতি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে পরিশোধ করা হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৫৩৮ টাকা।

















জামালগঞ্জ বাজারের হ্যাচারি মালিক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিদিন এ সড়কে ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহন করতে হয়। কিন্তু উন্নয়নের নামে গত দুই বছর থেকে সড়কটির বেহালদশা। পথ দিয়ে জামালগঞ্জে ট্রাক নিয়ে চালকরা আসতে চান না। ফলে অন্য পথে অনেক বেশি খরচ দিয়ে ট্রাকে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয়। 
অটো চালক রমজান আলী বলেন, কিস্তি দিয়ে অটো কিনে এ পথে চলতে গিয়ে অনেক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছি। সড়কে খানাখন্দ থাকার কারণে প্রতিদিন অটো বিকল হয়।

জয়পুরহাট শহর থেকে ভটভটি করে প্রতিদিন এ পথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করতে জামালগঞ্জ ও আক্কেলপুর শহরে যান যমুনা কম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মুক্তার হোসেন। তিনি বলেন, সড়কটিতে ভটভটি নিয়ে চলাচল করতে প্রচন্ড ঝাঁকুনি লাগে। পেটের নাড়ি-ভুড়ি ছিঁড়ে যায়। কখনও কখনও ভটভটি বিকল হয়।
জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় যোগ দিয়ে জেলার বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজের ধীর গতির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।  
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব কনস্ট্রাকশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি।
জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, কাজ না করার ফলে গত বছর ওই প্রকল্পের ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ফেরত গেছে। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ মাসের কাজ ২৫ মাসেও শেষ না হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি লাঘবে ২৮ দিনের মধ্যে সাইটে পর্যাপ্ত মালামাল ও লোকবল এনে সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অন্যথায় চুক্তি বাতিল করে অন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে।

 

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ