চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌফিক ইসলামের কক্ষের ড্রয়ারে সিগারেটের প্যাকেট থাকায় গত সোমবার তাকে পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন যুবকের চাপের মুখে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ভবনে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি। তবে এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছেন না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একই দিন পৌরসভার আরও দুই কর্মকর্তাকে সাদা কাগজে ‘পদত্যাগপত্র’ লিখতে বাধ্য করেছেন কয়েকজন যুবক। ভয়ে অফিসে যাচ্ছেন না তারাও। তবে তারা সুস্থ আছেন।
এই যুবকদের নেতৃত্বে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া ইসমাইল হোসেন সিরাজী। তিনি বলেন, ছাত্র জনতার চাপের মুখে তাদেরকে শান্ত করতে ওই কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাকে মানসিকভাবে চাপ দেওয়া হয়নি।
এরই মধ্যে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেইসবুকে। এতে দেখা যায়, একদল যুবক এসে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌফিক ইসলামের কক্ষে ঢুকে হইচই করতে থাকেন।
একজন বলতে থাকেন, অফিসে সিগারেটের গন্ধ, ভিডিও কর, ভিডিও কর।
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকৌশলী তৌফিককে সিরাজী বলেন, আপনার টাকা দিয়ে মাদক খান, গন্ধে কেউ আপনার কক্ষে ঢুকতে পারে না।
সিরাজী তার সঙ্গে থাকা তরুণদের জিজ্ঞেস করেন, ওই গন্ধ হচ্ছে?
সঙ্গীরা সমস্বরে জবাব দেন, হচ্ছে।
সিরাজী বলেন, অফিসে মাদক। আমরা বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত করতে চাই। তারই ধারাবাহিকতা হবে একে অফিস থেকে এখনই পদত্যাগ করে চলে যেতে হবে।
তিনি ওই কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন।
এরপর এই কর্মকর্তাকে দাঁড় করিয়ে তার পকেটে তল্লাশি করা হয়। কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর তাকে দাঁড় করিয়ে সিগারেটের প্যাকেট দুটি তার দুই কলারে পিন দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়। তখন সেই কর্মকর্তা কাঁপতে থাকলে তাকে বসানো হয়। এরপর একজন গ্লাসে করে পানি পান করান। তখনও তিনি কাঁপতে শুরু করলে একজন বলতে থাকেন, এই ছেড়ে দে, ছেড়ে দে।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, তৌফিকুল ইসলাম এ ঘটনায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে অফিসের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ওরা যে কী বলছিল বুঝতে পারছিলাম না। দুই তিন মিনিট পরই জ্ঞান হারিয়েছিলাম। ভয় পেয়েছিলাম, অনেকগুলো ছেলেপুলে।
তারা বলেছিল পদত্যাগ করতে, আমি তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।
মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার দুই দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। দুইটা টেস্ট দিয়েছে, রাজশাহী গিয়ে করাবো।
এদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে যাওয়ার আগে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ ছাড়াও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আহসান হাবীবের কক্ষে গিয়ে তাদেরকে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখতে বাধ্য করানো হয়।
মামুন অর রশিদ বলেন, তারা এসেছিল মেয়রকে নাকি পদত্যাগ করাবেন। মেয়র কি আমাদের আন্ডারে কাজ করে নাকি? এই পৌরসভার মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেছুর রহমান, যিনি সরকার পতনের পর ১৮ আগস্ট তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে তিনিসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদেরকে অপসারণ করা হয়েছে। তারা আমাকেও পদত্যাগ করতে বলেছিল। বাধ্য হয়ে যা বলেছে, তাই করেছি। তারা যেভাবে আক্রমণাত্মক ছিল, এখন তো জান বাঁচানো মুশকিল।