বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়ায় ‘পারভীন সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা সদস্যদের কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংস্থার ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আসবাবপত্র নিয়ে উধাও হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ফিরে পেতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ওই সংস্থার সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তারা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারভীন সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয় পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলা সদরে। সংস্থার উপ-পরিচালক কে এম নুরুজ্জামান ও অন্যরা গত ২০২২ সালে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া রেল ঘুমটি এলাকায় শাখা অফিস খুলে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শাখার ম্যানেজার মো. সুমন ও ক্যাশিয়ার মাহবুবা ওরফে মাছুরা। তারা ও তাদের নিয়োজিত লোকজন উচ্চ মুনাফার প্রলোভনে জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে সদস্য হন ও টাকা সঞ্চয় করেন।
পারভীন সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্য দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌরসভার সাবলা হিন্দুপাড়ার চন্দনা রানী মহন্ত জানান, তিনি গত বছরের মে মাসে পাঁচ বছর মেয়াদি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেন। সেই সঙ্গে মাসিক ৫০০ টাকার ডিপিএসও খোলেন। হঠাৎ বুধবার স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন, ওই সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিস বন্ধ করে উধাও হয়েছেন। দ্রুত সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পান।
অপর সদস্য সুমন মহন্ত জানান, তিনি আট মাস আগে পাঁচ বছর মেয়াদি চার লাখ ৫০ হাজার টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করেন। একইসঙ্গে দুই হাজার টাকার মাসিক ডিপিএস করেছেন। বর্তমানে সংস্থার লোকজন উধাও হওয়ায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
তালোড়া বাজার এলাকার নাসিমা খাতুন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, সাবলা এলাকার শ্যামল মহন্ত এক লাখ টাকা, সুচিত্রা রানী দুই লাখ টাকাসহ শুধু সাবলা এলাকার অন্তত ৬০ জন সদস্য ফিক্সড ডিপোজিট ও ডিপিএস হিসাব খুলেছেন। পারভীন সমাজ কল্যাণ সংস্থার ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার ও অন্যরা অফিসে তালা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রচার হলে সদস্যরা বৃহস্পতিবার দুপুরে তালোড়া এলাকার কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন। এক পর্যায়ে তারা সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এ সংস্থার সদস্য সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে শুধু সাবলা এলাকার সদস্যদের প্রায় ৭০ লাখ টাকা সঞ্চয় রয়েছে। তাদের ধারণা, সদস্যদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।
এদিকে সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না দিয়ে কার্যালয়ে তালা দিয়ে আত্মগোপন করার বিষয়ে জানতে ম্যানেজার সুমন ও ক্যাশিয়ার মাহবুবা ওরফে মাছুরার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নওগাঁ সদরে অবস্থিত পারভীন সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক কে এম নুরুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে দুপচাঁচিয়া থানার এসআই নিয়ামান নাসির জানান, তার কাছে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যরা এসেছিলেন। তাদের দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছিলেন। তাদের ফোন নম্বরগুলো বন্ধ থাকায় টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানা সম্ভব হয়নি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।